মেছোবিড়াল

মেছোবিড়াল/মেছোবাঘ

বাঘের মাসি বিড়াল।

শান্ত, আদুরে আর কোমল হলেও তর্জন-গর্জনে মাঝেমধ্যেই মাসিত্বের জানান দেয়। বন্য বিড়ালরা এই কাজে বেশি পটু। ঘুরে বেডায় বনে-বাদাড়ে। বাঘের মতই শিকার ধরে আহার করে তারা। মেছোবিড়াল তাদের মধ্যে পরিচিত শিকারী। মাছ, হাঁস বা মুরগি শিকার করতে গিয়ে প্রায়ই মারা পড়ার খবর শোনা যায়। মানুষ বা বড় প্রাণীকে কখনো আক্রমণ করে না তারা, তবুও মানুষ এদের ভয় পায়। তবে তাদের উপর হামলা করলে বা আটকে রাখলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। ক্ষেপে গেলে মানুষকেও আক্রমণ করে তারা। গ্রামেগঞ্জে মেছোবিড়াল দেখতে পেলেই পিটিয়ে মারা হয়।

মেছোবিড়াল প্রতিনিয়ত বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে বর্তমানে দশ হাজারেরও কম মেছোবিড়াল রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে International Union for conservation of nature  কর্তৃক এদেরকে Red list এ বিপন্ন প্রাণী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশেও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ১৯৭৪ ও ২০১২ এর তফসিল ১ অনুযায়ী এরা সংরক্ষিত প্রাণী। ছোটখাট বাঘের মত দেখতে বিড়াল পরিবারের এই সদস্যটি আমাদের দেশেও বিলুপ্তির পথে পা বাড়িয়েছে।

শ্রেণিবিন্যাস-

ইংরেজি নাম : Fishing cat.
বৈজ্ঞানিক নাম : Prionailurus viverrinus.
জগৎ : Animalia
পর্ব :  Chordata
শ্রেণি : Mammalia
বর্গ : Carnivora
উপবর্গ : Feliformia
পরিবার : Felidae
উপপরিবার : Felinae
গণ : Prionailurus
প্রজাতি : P. viverrinus

দেখতে বিড়ালের মত হলেও সাধারণ বিড়ালের সাথে মেছোবিড়ালের সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। মাঝারি গড়নের বিড়ালগুলো পাশাপাশি দৈর্ঘ্যে ৫৭-৭৮ সে.মি. এবং উচ্চতায় ২০-৩০ সে.মি.র মত হয়। তাদের পেছনে লম্বা একটি লেজ থাকে। ধূসর-বাদামি পশমে ঢাকা দেহ ছোপ ছোপ দাগে ভর্তি। মুখে লম্বা গোঁফ, স্থির বাদামি চোখ। দেখতে ছোটখাট বাঘই মনে হয়। দূর থেকে দেখে চিতাবাঘের ছানা মনে হতে পারে। অনেকে তাই এদের বাঘের সাথে মিলিয়ে ফেলে। নামের পেছনে বাঘ শব্দটিও লাগানো হয়েছে, যা এদের প্রতি ভীতি ও আক্রোশের একটি প্রধান কারণ। মানুষ তাদের সত্যিকারের বনের বাঘ মনে করে।

মেছোদের প্রধান খাদ্য মাছ। মাছ শিকারে তারা ভীষণ দক্ষ। তীরে নিঃশব্দে হেঁটে বেড়ায়, কাছাকাছি কোনো মাছ এলেই ক্ষিপ্রগতিতে ধরে ফেলে। এছাড়া ছোট সরীসৃপ, পাখি বা হাঁস-মুরগিও খাদ্য তালিকায় রয়েছে।

একসময় বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে মেছোবিড়ালের দেখা পাওয়া যেত। হাওর-বাওর, বিল, নদীতীরে বিচরণ করত তারা। হাকালুকি হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, বাইক্কা বিলসহ বিভিন্ন জলাভূমি অঞ্চলে প্রচুর মেছোবিড়ালের দেখা মিলত। এখনও মাঝেমধ্যে তাদের খবর পাওয়া যায়, তবে মৃত্যুর। বিপন্ন এই প্রাণীটিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। দিনে দিনে তাদের সংখ্যা কমে আসছে। এভাবে নিধন চলতে থাকলে একসময় পুরোপুরি বিলুপ্ত প্রাণীর খাতায় নাম লেখাবে মেছোবিড়াল।

মেছোবিড়াল মেরে অনেক সময় মৃত বিড়ালের ছবি প্রকাশ করা হয়।  পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠতে দেখা যায় হত্যাকারীদের। নিরীহ প্রাণীটিকে মারার মধ্যে কতটুকু গৌরব ও কৃতিত্ব জাহির হয় তা আমাদের জানা নেই, তবে তাতে যে আমরা ক্রমাগত জীববৈচিত্র‍্যের ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসছি, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

References-



The Fishing Cat: a feline fisher hunting by the night in wetlands" https://india.mongabay.com/2018/11/the-fishing-cat-a-feline-fisher-hunting-by-the-night-in-wetlands/

Post a Comment

Previous Post Next Post