সালোকসংশ্লেষণ

Photosynthesis 



6 CO₂+12 H₂O + Light energy → C₆H₁₂O₆ + 6 O₂ + 6 H₂O

একটা সিম্পল বিক্রিয়া।

এর উপর অনেকাংশেই নির্ভর করছে পৃথিবীর প্রাণীকুল,প্রায় সমস্ত জীবজগৎ। কারণ এই বিক্রিয়ার মাধ্যমেই বেঁচে থাকে এই পৃথিবীর ফুসফুস,সমস্ত প্রাণীকুলের সর্বোত্তম বন্ধু সবুজ উদ্ভিদ। যার মাধ্যমে উদ্ভিদ খাদ্য সঞ্চয় করে এবং বিনিময়ে বিলিয়ে দেয় অমূল্য অক্সিজেন।

বলা যেতে পারে- The reaction of Life. 

সিম্পল বিক্রিয়াটির গভীরে গেলে ধাপগুলো আপনার মোটেও সিম্পল মনে হবে না। অসংখ্য জটিল ধাপে অনেকগুলো বিক্রিয়ার সমন্বিত ফলাফল হিসেবে আমরা এ বিক্রিয়াটি পাই। যার প্রতিটি ধাপে রয়েছে উদ্ভিদের সুক্ষ্ম গাঠনিক অংশের কাজ, কাঠখোট্টা রাসায়নিক যৌগ, বিক্রিয়ার পর বিক্রিয়া। বিবর্তন প্রাণীজগৎকে কতটা বৈচিত্র‍্যপূর্ণ ও জটিল স্ট্রাকচার দিয়েছে তার অন্যতম একটা উদাহরণ এই পুরো প্রক্রিয়া। 

তো, এর ভাবসম্প্রসারণ করা যাক।

সালোকসংশ্লেষণের সহজ সংজ্ঞা মাধ্যমিক স্তরে সবাই জেনে এসেছি। সবুজ উদ্ভিদ সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পাতার ক্লোরোফিলের সাহায্যে যে প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড, পানি ও শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে তাকেই আমরা সালোকসংশ্লেষণ বা Photosynthesis বলি। এটি মূলত Oxygenic Photosynthesis এর সংজ্ঞা যেটি সবচাইতে কমন Photosynthesis.

সালোকসংশ্লেষণ দুই ধরনের।Oxygenic ও Anoxigenic. Oxygenic Photosynthesis এ আলোকশক্তির সাহায্যে পানি থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডে ইলেকট্রন স্থানান্তর ঘটে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ইলেকট্রন ডোনার হলো পানি। এ প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড বিজারিত এবং পানি জারিত হয়। এই Photosynthesis ঘটে সকল সবুজ উদ্ভিদ, শৈবাল ও সায়ানোব্যাকটেরিয়ায়, যারা প্রাণী হতে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে আবার অক্সিজেন তৈরি করে ভারসাম্য বজায় রাখে।

অনেক অণুজীবে Anoxygenic Photosynthesis ঘটে। কিছু ব্যাকটেরিয়া যেমন পার্পল ব্যাকটেরিয়া বা গ্রিন সালফার ব্যাকটেরিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। এই পদ্ধতিতে পানির বদলে ইলেকট্রন ডোনার হিসেবে অন্য যৌগ কাজ করে, যেমন আর্সেনাইট। তাতে অক্সিজেন নির্গত হয় না, বরং উপজাত হিসেবে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস নির্গত হয়। যেমন কিছু ব্যাকটেরিয়া পচা ডিমের গন্ধযুক্ত হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস ব্যবহার করে এবং সালফারের বিভিন্ন গ্যাস নির্গত করে। 



যদিও পুরো প্রক্রিয়াগুলো অত্যন্ত জটিল, কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলোকে ব্যাখ্যা করা যায়।

6 CO₂ + 12 H₂O + Light Energy(photons) → C₆H₁₂O₆ + 6 O₂+ 6 H₂O 

এটি Oxygenic Photosynthesis এর বিক্রিয়া সমীকরণ, যাতে ৬ অণু কার্বন ডাই অক্সাইড ১২ অণু পানির সাথে আলোকশক্তি তথা ফোটনের সাহায্যে বিক্রিয়া করে ৬ অণু গ্লুকোজ,পানি ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে। এটা সেই অক্সিজেন, যা আমরা নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করি।

Anoxygenic Photosynthesis এর বিক্রিয়া সমীকরণ কিছুটা আলাদা।

CO₂ + 2 H₂A + Light Energy (photons) → [CH₂O] + 2 A + H₂O

এখানে A হলো ইলেকট্রন ডোনার,সেটা যেকোনো যৌগ হতে পারে। কেমন যৌগ তা নির্ভর করবে কোন পরিবেশে সালোকসংশ্লেষণ সংঘটিত হচ্ছে তার উপর। এসিডিক পরিবেশ বা আলাদা কেমিক্যালীয় কন্ডিশনে বসবাসকারী কিছু ব্যাকটেরিয়া সেখানকার উপাদানকে ইলেকট্রন ডোনার হিসেবে কাজে লাগায়। 

যেমন আর্সেনাইটের উপস্থিতিতে সংঘটিত বিক্রিয়াটি হবে এরকম-

CO₂ + AsO₃³⁻  + photons → AsO₃⁴⁻ + CO 

সালোকসংশ্লেষণে উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনকারী অঙ্গাণু প্লাস্টিড।প্লাস্টিড তিন প্রকার আমরা জানি। ক্লোরোপ্লাস্ট, ক্রোমোপ্লাস্ট এবং লিউকোপ্লাস্ট। ক্লোরোপ্লাস্টে থাকে ক্লোরোফিল পিগমেন্ট।



বেশিরভাগ সবুজ উদ্ভিদ ক্লোরোফিলের সাহায্যে আলো শোষণ করে নেয়। সবুজ উদ্ভিদে লাইট স্পেকট্রামের সবুজ অংশ শোষিত না হয়ে প্রতিফলিত ও বিকিরিত হয়ে যায় ক্লোরোফিলের কারণে। এজন্যই উদ্ভিদ সবুজ রঙের হয়। এছাড়া কিছু উদ্ভিদে জ্যান্থোফিল এবং ক্যারোটিনও সালোকসংশ্লেষণে সাহায্য করে।

সবুজ শৈবাল ক্লোরোফিলের পাশাপাশি ব্যবহার করে ফাইকোসায়ানিন, ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিল। লাল শৈবাল সালোকসংশ্লেষণে ফাইকোরিথ্রিন এবং বাদামি শৈবাল ও ডায়াটম ফিউকোজ্যান্থিন ব্যবহার করে ক্লোরোফিলের সাথে। যেসব পিগমেন্ট সালোকসংশ্লেষণ ঘটাতে পারে তাদের বলে ফটোসিনথেটিক পিগমেন্ট। 

সবুজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণ হয় প্রধানত পাতায়। পাতার মেসোফিল টিস্যুতে প্রতি মিলিমিটারে প্রায় ৪.৫ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদে কান্ডেই সালোকসংশ্লেষণ ঘটে। উদ্ভিদের পাতায় ওয়াক্সি নামে বিশেষ কিউটিকলের আবরণ পাতায় আল্ট্রাভায়োলেট ও ব্লু লাইটের শোষণকে বাধা দেয় এবং তাপ থেকে রক্ষা করে যাতে পানি অতিরিক্ত বাষ্পীভূত না হয়ে যায়।

সালোকসংশ্লেষণ সাধারণত ঘটে দুটি পর্যায়ে। Light-dependent (আলোকনির্ভর) ও  Light-independent (আলোক নিরপেক্ষ) পর্যায়। যে পর্যায়ে বিক্রিয়াগুলো চলমান রাখতে সরাসরি আলোর সাহায্য প্রয়োজন সেটা আলোকনির্ভর এবং যেটায় আলোর প্রত্যক্ষ সংযোগ দরকার নেই সেটাকে আমরা আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় বলি।

Light-dependent reactions -

আলোকনির্ভর পর্যায় ঘটে ক্লোরোপ্লাস্টের থাইলাকয়েড মেমব্রেনে।এখানে থাকে Light Harvesting Antenna Complexes. এই কমপ্লেক্সগুলো বিভিন্ন পিগমেন্ট ও প্রোটিন দিয়ে তৈরি। কমপ্লেক্সগুলো ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে।

এ পর্যায়ে মূলত চারটি কমপ্লেক্স একসাথে কাজ করে। সেগুলো হলো - Photosystem II (PSII), Cytochrome b6f complex, Photosystem I (PSI), এবং ATP Synthase। 



ফটোসিস্টেমগুলো পিগমেন্টের সেট। তাতে থাকে ক্লোরোফিল এ ও বি, জ্যান্থোফিল, ক্যারোটিন ইত্যাদি নানা ধরনের পিগমেন্ট। তাদের কাজ আলো শোষণ করা। PSI ও PSII আলাদা আলাদা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে নেয়। আলোক নির্ভর পর্যায় শুরু হয় ফটোসিস্টেম - II এ। যখন সেখানে থাকা ক্লোরোফিল অণু সূর্যের আলোর ফোটন অ্যাবজর্ব করে, সেখানে থাকা ইলেকট্রন শক্তি পায়। শক্তি পাওয়ার কারণে উত্তেজিত হয়। ইলেকট্রন এই আনস্টেবল স্টেটের কারণে  দ্রুত পাস হয় ইলেকট্রন অ্যাকসেপ্টরের দিকে। ফটোসিস্টেম অনেকগুলো ইলেকট্রন আ্যাকসেপ্টরের সাথে যুক্ত। অ্যাকসেপ্টরগুলো সেট আকারে ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইন তৈরি করে। ট্রান্সপোর্ট চেইনের প্রথম ইলেকট্রন আ্যাকসেপ্টরের নাম ফিওফাইটিন। ইলেকট্রন প্রথমে ফিওফাইটিনে যায়, ফিওফাইটিন থেকে প্লাস্টিকুইনন, প্পাস্টিসায়ানিন, এরপর ফেরোডক্সিন এভাবে অনেকগুলো ধাপ পার করার পর ফাইনাল অ্যাকসেপ্টর NADP কে H⁺ সহকারে বিজারিত করে NADPH উৎপন্ন করে। 



Cytochrome b6f এনজাইম এবং ATP Synthase প্রোটিনের কাজ হলো ATP তৈরি করা। এই প্রক্রিয়াকেই আমরা চিনি ফটোফসফোরাইলেশন নামে। এটাও দুই ধরনের। সাইক্লিক ও নন-সাইক্লিক। নন সাইক্লিক প্রক্রিয়ায় Cytochrome b6f PSII থেকে ইলেকট্রন ও PSI থেকে শক্তি ব্যবহার করে প্রোটন পাম্প করার জন্য। ইলেকট্রন যে শক্তি নির্গত করে  তার কিছু অংশ Cytochrome b6f গ্রহণ করে এবং থাইলাকয়েডের চারদিকে H⁺ আয়নের একটা আবরণ তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় কেমিঅসমোসিস বা প্রোটন পাম্পিং। H⁺ আয়নের আবরণকে বলা হয় প্রোটন গ্র‍্যাডিয়েন্ট। যেটা  ATP Synthase পরবর্তীতে ATP তৈরির জন্য ব্যবহার করে। 



সাইক্লিক প্রক্রিয়ায় শুধু ATP তৈরি হয় এবং NADPH উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কারণ সাইক্লিক প্রক্রিয়ায় ট্রান্সফার এমনভাবে ঘটে যাতে ATP পর্যন্ত শক্তি ট্রান্সফার হয়ে আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসে। ফলে অতিরিক্ত NADPH তৈরি হয় না। NADPH ব্যালেন্সের জন্য সাইক্লিক প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

পুরো প্রক্রিয়ার বিক্রিয়া সমীকরণ -

2 H₂O + 2 NADP⁺ + 3 ADP + 3 Pi + light (photons) → 2 NADPH + 2 H⁺ + 3 ATP + O₂

ফটোসিস্টেম কমপ্লেক্স এই শক্তিকে ব্যবহার করে আবার ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট শুরু করে দেয়। ফটোসিস্টেমিক রিয়েকশন সেন্টারের যে পিগমেন্ট সেট ফোটন গ্রহণ করে তাদের বলা হয় Special Pair. ইলেকট্রনের স্টেটে চেঞ্জ আসায় Special Pair থেকে মুক্ত হয়ে অন্য মলিকিউলে ট্রান্সফার হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে চার্জ সেপারেশন। এটা খুব দ্রুত গতির, মাত্র ১০ পিকোসেকেন্ডে সম্পন্ন হয়। ইলেকট্রন এক্সাইটিং স্টেটে যাওয়ার ফলে শক্তি নির্গত করে আবার স্বাভাবিক স্টেটে ফিরতে চায়। শক্তি তাপ, মলিকিউলার মোশন কিংবা লাইট স্পেকট্রাম হিসেবে বিকিরিত হতে পারে। আলো হিসেবে বিকিরিত হওয়ার ঘটনাটিকে আমরা বলি ফ্লূরোসেন্স। 

শক্তি নির্গত করার পর ইলেকট্রন চলে যায় পরবর্তী ইলেকট্রন অ্যাকসেপ্টরে। এভাবে ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চক্রাকারে চলতে থাকে।  



ইলেকট্রন হারানোর ফলে স্পেশাল pair পজিটিভলি চার্জড হয়। তখন তারা পানি হতে ইলেকট্রন গ্রহণ করে গ্রাউন্ড স্টেটে ফিরে আসে। তাই পানিকে বলা হয় ইলেকট্রন ডোনার। পানি বিশ্লেষিত হয়ে উৎপন্ন হয় ইলেকট্রন, প্রোটন এবং মলিকিউলার অক্সিজেন। 

ইলেকট্রন ডোনারের বিক্রিয়ার ধাপটা আমরা চিনি ফটোলাইসিস নামে।

Photolysis-

ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইনে যখন ইলেকট্রন ট্রান্সফার ঘটতে থাকে, ফটোসিস্টেমের রিয়েকশন সেন্টার ইলেকট্রন হারানোর ফলে জারিত অবস্থায় থেকে যায়। ফটোসিস্টেমের কাজের ব্যালেন্স রাখার জন্য তার আগের অবস্থায় ফিরে আসা জরুরি। তাই রিয়েকশন সেন্টারে পুনরায় বিজারণের দরকার হয়। প্রয়োজনীয় ইলেকট্রন সে পায় কোনো ইলেকট্রন ডোনার থেকে, যেভাবে শুরুতে বলেছি। সেক্ষেত্রে বিক্রিয়াটি হয় নিম্নরূপ-

H₂A + 2 photons (light) → 2 e⁻ + 2 H⁺ + A

সবুজ উদ্ভিদে A হলো অক্সিজেন, এবং ইলেকট্রন ডোনার H₂O. অন্যান্য অর্গানিজমের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ডোনার থাকতে পারে। যেমন গ্রিন বা পার্পল সালফার ব্যাকটেরিয়ায় ব্যবহার হয় H₂S গ্যাস।

Oxygenetic Photosyntheses এ বিক্রিয়াটি হবে- 

H₂O + 2 photons (light) → 2 e⁻ + 2 H⁺ + O₂



পুরো ধাপটিতে প্রধান ভূমিকা রাখে ফটোসিস্টেমের Oxygen Evolving Complex. যেখানে কো-ফ্যাক্টর হিসেবে থাকে ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম ও ক্লোরাইড আয়ন। পুরো কমপ্লেক্স এতটাই শক্তিশালী জারক যে তারা পানির মত স্ট্যাবল অণুরও জারণ ঘটাতে পারে। ফটোসিস্টেমের রিয়েকশন সেন্টার এই পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে শক্তিশালী বায়োলজিক্যাল এনজাইম যা পানিরও জারণ ঘটাতে পারে। রিয়েকশন সেন্টারে পানি ইলেকট্রন, প্রোটন ও হাইড্রোজেন আয়নে বিভক্ত হয়ে যায়। পুরো চক্রের শেষে প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন নির্গত হয়৷ সেই মহামূল্যবান অক্সিজেন, যা আমরা নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করি। 

এভাবে সবগুলো ধাপ চাক্রিক আকারে চলতে থাকে, প্রতিটি ধাপ একটি অপরটির সাথে সুক্ষ্মভাবে জড়িত।

প্রোটনগুলো ATP Synthesis তথা ফটোফসফোরাইলেশনে কাজে আসে। আর ইলেকট্রন ফটোসিস্টেমে পুনরায় ফিরে এসে ফটোসিস্টেমে আবার ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্টেশন চালু রাখে।সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে সালোকসংশ্লেষণে পানির ভূমিকা কতটুকু। 



এখন আসি ২য় পর্যায়ে যেটাকে আমরা বলি আলোক-নিরপেক্ষ পর্যায়। কেন আলোক-নিরপেক্ষ বলি? কারণ এই ধাপে লাইট এনার্জি দরকার হয় না। আলোক-নির্ভর পর্যায়ে যে লাইট এনার্জি কেমিক্যাল এনার্জিতে কনভার্ট হয়, নিরপেক্ষ পর্যায়ে সেই কেমিক্যাল এনার্জিই ব্যবহার হয়ে শর্করা তৈরি হয়। 

আলোক-নিরপেক্ষ পর্যায়ে সরাসরি আলো দরকার না হলেও গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রভাবক ATP এবং NADPH আলোক-নির্ভর পর্যায় থেকেই আসে। কাজেই পরোক্ষভাবে নিরপেক্ষ পর্যায় আলোকনির্ভর পর্যায়ের উপরেই নির্ভরশীল।

আলোক-নিরপেক্ষ পর্যায়ের প্রধান কাজ হলো বায়োলজিক্যাল কার্বন ফিক্সেশন। ফিক্সেশন এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে যেকোনো ইনঅর্গানিক কার্বনের মাধ্যমে অর্গানিক কার্বন যৌগ তৈরি করা হয়।  বায়োলজিক্যাল ফিক্সেশনে কাজটা কোনো জীবের মধ্যে সম্পন্ন হয়। সালোকসংশ্লেষণে সেই কার্বনটা আসে  CO₂ থেকে,এবং প্রোডাক্ট হিসেবে পাওয়া যায় শর্করা। 

সবুজ উদ্ভিদে কার্বন ফিক্সেশনের তিনটি পাথওয়ে শনাক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো- C3, C4 ও CAM.

সবগুলোতে পাথওয়েতে কিছু এনজাইম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বিক্রিয়ার প্রথম উৎপাদ কী হবে তা নির্ধারিত হয় সেই এনজাইম দ্বারা। 

C3 Cycle-

এই চক্রকে আমরা ক্যালভিন চক্র নামেও চিনি। এর আবিষ্কারক ম্যালভিন ক্যালভিনের নামে এই নাম। ক্যালভিন চক্র সংঘটিত হয় ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমায়। স্ট্রোমা সেই অঞ্চল, যেখানে অসংখ্য এনজাইমের স্যুপ থাকে যেগুলো সালোকসংশ্লেষণ নিয়ন্ত্রণ করে। 

ক্যালভিন চক্র শুরু হয় Ribulose Biphosphate [RUBP -C₅H₁₂O₁₁P₂] থেকে। যেটায় থাকে পাঁচ কার্বন অণু। RUBP পরিণত হয় ২ অণু 3-PGA [Phosphoglyceric acid -C₃H₇O₇P] 

তাহলে, উৎপাদের এক্সট্রা কার্বন আসে কোথা থেকে? কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে। এটাই কার্বন ফিক্সেশন। পুরো প্রক্রিয়া পরিচালিত করে একটি এনজাইম,যার নাম RUBiSCO. [Ribulose-1,5-bisphosphate carboxylase-oxygenase] এবং প্রভাবক ও বিজারণ সহায়ক হিসেবে থাকে ATP ও NADPH. 



কার্বন ডাই অক্সাইড প্রথমে স্ট্রোমায় প্রবেশ করে। এরপর RUBISCO এর ক্যাটালাইসিসের মাধ্যমে রাইবুলোজ বাইফসফেটের সাথে যুক্ত হয়ে দুই অণু 3-PGA তৈরি করে। PGA তিন কার্বন বিশিষ্ট হওয়ায় এই চক্রের নাম C3 চক্র।

RUBP + CO₂  → 2 PGA-3

PGA-3 ATP ও NADPH  এর উপস্থিতিতে বিজারিত হয়ে উৎপন্ন করে  G3P - [Glyceraldehyde-3-phosphate - C₃H₇O₆P]  নামক যৌগ। 

2 PGA-3 (2 ATP, 2 NADPH 2 G3P 2 ADP, 2 NADP)  →  2 G3P

G3P এর বেশিরভাগ আবার RUBP তে রিজেনারেট হয়। G3P প্রথমে DHAP  [Dihydroxyacetone phosphate - C₃H₇O₆P - Isomer of G3P] এর সাথে বিক্রিয়া করে। এরপর অনেকগুলো ধাপে বিক্রিয়া চলতে থাকে এবং RUBP পুনরায় তৈরি হয়। 

এই ধাপগুলোকে প্রভাবিত ও চালনা করে ATP, NADP ও অনেকগুলো আলাদা আলাদা এনজাইম। এবং প্রতিটি ধাপেই অনেকগুলো আলাদা উৎপাদ পাওয়া যায়। শেষে গিয়ে পাই RUBP.।

3 G3P + 2 DHAP (3 ATP,  3 ADP) → 3 RuBP

আর যেহেতু G3P একটি ট্রায়োজ, তাই এর থেকে গ্লুকোজও পাওয়া যায়,যা আমাদের এই পুরো প্রক্রিয়ার প্রত্যাশিত উৎপাদ। 



প্রত্যেক গাছে থাকে গ্লুকোনিওজেনেসিস পাথওয়ে। এর মাধ্যমেই G3P পরিণত হয় গ্লুকোজে। ট্রায়োজ ফসফেট আইসোমারেজ ও অ্যালডোলেজ নামক এনজাইমের সাহায্যে G3P পরিণত হয় Fructose-1, 6-diphosphate এ। এরপর ডিফসফোরাইলেশনের মাধ্যমে আমরা পাই হেক্সোজ - প্রধানত গ্লুকোজ। 

G3P + DHAP (Aldolase) → FBP 

FBP (Phosphatase) → F6P [C₆H₁₄O₁₂P₂]

F6P (Dephosphorylation) → C₆H₁₂O₆

এভাবে C3 কার্বন ফিক্সেশন চলতে থাকে RUBP রিজেনারেশনের মাধ্যমে।

উদ্ভিদ তার কার্বন ফিক্সেশন চালিয়ে যাওয়ার জন্য পত্ররন্ধ্র বা স্টোমাটার মাধ্যমে ক্রমাগত CO₂ পেতে থাকে। তাই তাকে পত্ররন্ধ্র খোলা রাখতে হয়। কিন্তু,যদি উদ্ভিদটি খুব উষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত হয় তবে পত্ররন্ধ্র খোলা রাখার কারণে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে পানি হারাতে থাকে। তাই তাকে একসময় পত্ররন্ধ্র বন্ধ করে দিতে হয়। কিন্তু এতে আবার বাধে আরেক বিপত্তি। স্টোমাটার মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেন দুই-ই প্রবেশ করে। যতক্ষণ পর্যন্ত পত্রবন্ধ্র খোলা থাকে, কার্বন ডাই অক্সাইডের কন্সট্যাল্ট সাপ্লাইও চলতে থাকে এবং উদ্ভিদ সেটাকে সালোকসংশ্লেষণে কাজে লাগায়। অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে না। ফলে CO₂ এবং O₂ এর ব্যালেন্স থাকে। পত্ররন্ধ্র বন্ধ করে দেয়ার ফলে CO₂ কমে গিয়ে অক্সিজেনের মাত্রা বেশি হয়ে যায়। তখন RUBP অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে ফেলতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ফটোরেসপিরেশন। 

RUBISCO এনজাইমের কাজ RUBP কে কার্বন দ্বারা ফিক্স করা। কিন্তু সে অক্সিজেনও ফিক্স করাতে পারে। তাই অক্সিজেনের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে কার্বনের বদলে তখন অক্সিজেন যুক্ত হওয়া শুরু হয়। ফটোরেসপিরেশনে 3-PGA তৈরির পাশাপাশি দুই কার্বন বিশিষ্ট ফসফোগ্লাইকোলেট উৎপন্ন হয়। যেটা ক্যালভিন সাইকেলে অংশ নিতে পারে না। যার কারণে ফটোরেসপিরেশন এনার্জি নষ্ট করে। 

তাহলে পত্ররন্ধ্র বন্ধের ফলে যেহেতু এমন সমস্যা দেখা দেয়, সেই পরিস্থিতিকে অতিক্রম করার জন্য কোনো সমাধান প্রয়োজন। এখানেই আসে আমাদের জীবজগতের সকল গল্পের নায়ক, বিবর্তন। কিছু গাছ,এই পরিস্থিতিকেও মোকাবেলার করার জন্য বিবর্তিত হয়েছে। তাদের বলা হয় C4 উদ্ভিদ। 

অর্থাৎ,উঞ্চমন্ডলীয় স্থানে C3 এর চাইতে এই C4  চক্র বেশি এফিশিয়েন্ট। কীভাবে? তাদের পাতার গঠন ও এনজাইমের দিকে নজর দেয়া যাক। 

C4 Cycle-

এই চক্রকে হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র নামেও চিনি আমরা। C3 চক্রে স্টোমাটা বন্ধ থাকলে যেহেতু অক্সিজেন ফটোরেসপিরেশন ঘটায়,তাই সেটাকে অতিক্রম করতে পাতায় এমন স্ট্রাকচার থাকতে হবে যেটা অক্সিজেনকে বাধা দেয়। 

সাধারণ C3 উদ্ভিদে পাতার উপরের স্তরে থাকে ওয়াক্সি কিউটিকল, এর নিচে থাকে মেসোফিল এবং তার নিচে থাকে ভাস্কুলার বান্ডেল। স্টোমাটা দিয়ে CO₂  এবং O₂ সরাসরি মেসোফিলে প্রবেশ করে। C3 উদ্ভিদের মেসোফিলে থাকে RUBISCO  যা অক্সিজেন, কার্বন দুই-ই ফিক্স করে৷ এর উৎপাদগুলো সরাসরি প্লাজমোডেজমাটায় যায়। কিন্তু C4 উদ্ভিদের মেসোফিলে থাকে ভিন্ন উপাদান। এর নাম PEP [Phosphoenolpyruvate carboxylase - C₃H₅O₆P]



এখানেই মেলে সমাধান। PEP অক্সিজেন ফিক্স করতে পারে না। PEP CO₂ এর বিক্রিয়ায় তৈরি করে অক্সালোএসিটেট। যার কার্বন সংখ্যা ৪. তাহুলে বোঝা যায় কেন এই চক্রের নাম C4 চক্র,কারণ এখানে প্রাথমিক উৎপাদ একটি ৪ কার্বনবিশিষ্ট অণু। 

CO₂ + OH⁻ → HCO₃⁻

PEP + HCO₃⁻ → OXALOACETATE [C₄H₄O₅]

C4 উদ্ভিদেও কিন্তু ক্যালভিন চক্র ঘটে। প্রকৃতপক্ষে C4 এর সর্বশেষ ধাপ ক্যালভিন চক্রই। সুতরাং এখানে এখানে মূল পার্থক্যটা কী? 

যখন আমরা 3-PGA না পেয়ে 4- অক্সলোএসিটেট পাই, এই যৌগ আবার পরিণত হয় ম্যালেট অথবা আ্যাসপার্টেট [C₄H₆O₅] এ। ম্যালেট ও আ্যাসপার্টেট আবার ভেঙে গিয়ে PEP এবং CO₂ তৈরি করে। 

OXALOACETATE + NADPH + MDH → MALATE [C₄H₆O₅]  + NADP⁺

C₄H₆O₅ (Malic enzyme) → CO₂ + Pyruvate [C₃H₄O₃] 

C₃H₄O₃ [Pyruvate carboxylase] → PEP 

তাহুলে পুরো প্রক্রিয়ায় সালোকসংশ্লেষণ কোথায়? আমরা তো আবার কার্নন ডাই অক্সাইডই ফিরে পাচ্ছি। 

এখানেও বিবর্তন। C4 উদ্ভিদে মেসোফিলের নিচে থাকে স্পেশাল কিছু কোষ,এদের বলা হয় Bundle Sheath Cells. এদের অক্সিজেনের সাথে সরাসরি কোনো সংযোগ নেই। 



ম্যালেট থেকে পাওয়া  PEP মেসোফিলে ফিরে যায়। আর CO₂ চলে যায় BS কোষগুলোতে। যেখানে যথারীতি RUBP থাকে, আর RUBP এর উপস্থিতিতে ক্যালভিন চক্র ঘটে। তাহুলে C4 উদ্ভিদের সুবিধা হলো ফটোরেসপিরেশন কমিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে আরো এফিশিয়েন্ট করা, যাতে এনার্জি নষ্ট না হয়। এজন্য উষ্ণমন্ডলীয় স্থানে বেশিরভাগ C4 উদ্ভিদ দেখা যায়, কারণ সেখানে অতিরিক্ত গরমে কিছু সময়ের জন্য বা দীর্ঘ সময় ধরে স্টোমাটা বন্ধ রাখতে হয় তাদের। C3 উদ্ভিদ সেখানে ভালো সার্ভাইভ করতে পারে না। 

খুব বেশি উত্তপ্ত স্থান যেমন মরুভূমিতে C4 এর চেয়েও উন্নত মেকানিজম দরকার। কারণ সেখানে দিনের বেলায় অত্যধিক গরমের কারণে স্টোমাটা পুরো দিনই একেবারেই বন্ধ রাখতে হয়। অর্থাৎ দিনের বেলায় সেখানে CO₂ প্রবেশের সুযোগ একেবারেই নেই। সুতরাং তাদের রাতের বেলায় গৃহীত CO₂ দিয়ে যাতে সারাদিন সালোকসংশ্লেষণ চালানো যায়, এমন ব্যবস্থা করতে হবে। 

এখানেই আসে CAM পাথওয়ে।

CAM Cycle-

CAM Cycle এর পূর্ণরুপ হলো Crassulacean Acid Metabolism.

এই পাথওয়ের নাম এসেছে Crassulaceae থেকে, এ ফ্যামিলির গাছে সর্বপ্রথম CAM চক্র আবিষ্কৃত হয়। CAM উদ্ভিদগুলো খুব উষ্ণ স্থান যেমন মরুভূমিতে পাওয়া যায়। তাই দিনের বেলা পানির অত্যধিক বাষ্পীভবন রোধ করতে স্টোমাটা পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয় তাদের। CO₂ ব্যাপিত হওয়ার সুযোগ পায় রাতের বেলা। এদের মধ্যেও C4 উদ্ভিদের মতো PEP থাকে এবং একই পদ্ধতিতে তারা অক্সালোএসিটেট উৎপন্ন করে। 

এরপরের প্রক্রিয়াও C4 এর মতোই। কিন্তু পার্থক্য হলো অক্সালোএসিটেটে পরিণত হওয়ায় পর তারা সেই এসিটেটকে ম্যালেটে বা আ্যাসপার্টেটে পরিণত করে এবং সারারাত সেটা সংরক্ষিত থাকে সেই অবস্থাতেই। ম্যালিক এসিডরুপে। দিনের বেলা তারা তাদের স্টোমাটা খুলে না, কিন্তু তবুও সালোকসংশ্লেষণ চালিয়ে যেতে পারে। কারণ ম্যালেট বা আ্যাসপার্টেট তখন C4 চক্রের মতোই PEP ও CO₂ তে পরিণত হয়। তারপর সেখানে বরাবরের মতোই ক্যালভিন চক্র ঘটে। 



পুরো ব্যাপারটাতে সুবিধা হলো, এর মাধ্যমে RUBISCO র চারপাশে দিনের বেলায়ও সবসময় উচ্চ ঘনত্বের CO₂ এর কন্সট্যান্ট সাপ্লাই রাখা যায়, পত্ররন্ধ্র খোলার প্রয়োজন হয় না। এরপর C3 চক্রের মাধ্যমে যথারীতি গ্লুকোজ ও অন্যান্য শর্করা তৈরি হয়। এই চক্রে প্রায় ৯৭% ওয়াটার লস আটকানো যায়। এটাই সালোকসংশ্লেষণের সবচেয়ে এফিশিয়েন্ট পাথওয়ে। 

সবুজ উদ্ভিদের ফটোসিনথেসিস এখানেই শেষ। তিনটি পাথওয়েতেই আমরা গ্লুকোজ বা অন্যান্য শর্করা এবং অক্সিজেন পাই। পৃথিবীর সমস্ত উদ্ভিদ এই চক্রগুলোর মাধ্যমেই সালোকসংশ্লেষণ ঘটায়।

এবার অন্যান্য ফটোসিনথেটিক জীবের দিকে তাকাই।

বিবর্তন বিভিন্ন পরিবেশের উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণে বৈচিত্র‍্য এনেছে।

জলজ উদ্ভিদের মধ্যে যারা পানিতে ভাসমান থাকে তারা সবুজ উদ্ভিদের মত একইভাবে সালোকসংশ্লেষণ ঘটাতে পারে। কচুরিপানা বা শাপলার মতো উদ্ভিদের পাতায় ক্লোরোফিল আছে, অন্যান্য প্রয়োজনীয় অংশও আছে। এরা সাধারণত C3 চক্র ঘটায়,কারণ জলে অবস্থিত হওয়ার কারণে এরা ঠান্ডা থাকে সবসময়,আর পানিরও অভাব নেই।

শৈবালের সালোকসংশ্লেষণও সবুজ উদ্ভিদের মতই। এদেরও ক্লোরোফিল আছে, আছে ফটোসিস্টেম এবং সকল দরকারি কমপ্পেক্স। তাই সবগুলো ধাপ প্রায় একই। 

পানির নিচে থাকা উদ্ভিদরা পানি থেকে দ্রবীভূত কার্বন ডাই অক্সাইড বা বাইকার্বনেটের সাহায্যে সালোকসংশ্লেষণ করে। যেহেতু পানির নিচে আলো ভালোভাবে পৌছায় না, তাই এদের সালোকসংশ্লেষণ খুব ধীরগতির হয়। তারা অতিরিক্ত পানি ও লবণ দূর করার জন্য বিশেষ ম্যাকানিজমকে কাজে লাগায় এবং অসমোটিক ব্যালেন্স ধরে রাখে। এছাড়া স্বল্প আলোতেও সালোকসংশ্লেষণের জন্য এরা বিশেষভাবে বিবর্তিত হয়েছে।

ব্যাকটেরিয়ার সালোকসংশ্লেষণ সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং।



অনেক ধরনের ফটোসিনথেটিক ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। পরিবেশের উপর ভিত্তি করে এরা অক্সিজেন নির্ভর বা অনির্ভর হয়। সায়ানোব্যাকটেরিয়া Oxygenic Photosynthesis ঘটায়। এদের মেমব্রেনগুলো প্লাস্টিডের মতোই। বস্তুত বৈবর্তনিক ধারায় প্লাস্টিডকে সায়ানোব্যাকটেরিয়ার আত্মীয় বলা হয়। এরা একসময় প্রাচীন পৃথিবীর প্রধান অক্সিজেনদাতা ছিল। তাদের সালোকসংশ্লেষণও উদ্ভিদের অনেকটা কাছাকাছি। এর উপর অতিরিক্ত অ্যাডভান্টেজও আছে। জলের নিচে থাকা সায়ানোব্যাকটেরিয়াতে থাকে ফাইকোবিলিপ্রোটিন। ফাইকোসায়ানিন, ফাইকোএরিথ্রিন, আ্যালোফাইকোসায়ানিন ইত্যাদি কয়েক ধরনের ফাইকোবিলিপ্রোটিন থাকে। যেগুলো কম আলোতে যতটুকু পারে আলো শোষণ করে নেয়। এরপর সেটাকে লাল আলো হিসেবে ছাড়ে। এটাই সেই ফ্লুরোসেন্স। ক্লোরোফিল এই লাল আলোকে কাজে লাগায় এবং সালোকসংশ্লেষণ করতে থাকে। 

প্রোটিওব্যাকটেরিয়া সায়ানোদের মতো অক্সিজেন নির্ভর না। তাদের বেশিরভাগের মধ্যে থাকে একটিমাত্র ফটোসিস্টেম যেটাকে বলা হয় ব্যাকটেরিওক্লোরোফিল। তারা ইলেকট্রন ডোনার হিসেবে অক্সিজেন বা পানি ব্যবহারে অক্ষম। পরিবর্তে ব্যবহার করে জৈব এসিড বা হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস। এদের মেমব্রেন থাকে কিছু সিম্পল ইলেকট্রন সেন্টার, যার মধ্য দিয়ে ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট ঘটে। সেখানে প্রোটন গ্র‍্যাডিয়েন্টও তৈরি হয়। পরে ATP Synthase এর মাধ্যমে ATP তৈরি কর এবং তারপর কার্বন ফিক্সেশন ঘটায়। 



এছাড়া গ্রিন সালফার ব্যাকটেরিয়া, পার্পল ব্যাকটেরিয়াসহ আরো অনেক ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে সালোকসংশ্লেষণ ঘটাতে পারে।

এই হচ্ছে সালোকসংশ্লেষণের ভাবসম্প্রসারণ।

পদ্ধতি যেমনই হোক, ফাইনালি আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত রিয়েকশন অফ লাইফ পাই, যার উৎপাদ গ্লুকোজ বা অন্যান্য শর্করা। সেটা থেকে উদ্ভিদ পায় খাদ্য, শ্বসনের মাধ্যমে পায় শক্তি। আর বিক্রিয়ার ওয়েস্ট প্রোডাক্ট হিসেবে আসে অক্সিজেন।

এই বিক্রিয়ায় যে জিনিসটা ওয়েস্ট, সেটাই আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটাই আমাদের এবং পুরো পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখে। 

সেই আদিম সায়ানোব্যাকটেরিয়া থেকে শৈবালসহ বর্তমান পৃথিবীর সকল উদ্ভিদকে সালাম জানাই আমাদের অক্সিজেন উপহার দেয়ার জন্য। 

পৃথিবীতে প্রাণ টিকিয়ে রাখার জন্য।


References- 


https://en.m.wikipedia.org/wiki/Photosynthesis

https://www.sciencedirect.com/topics/agricultural-and-biological-sciences/light-dependent-reactions

https://courses.lumenlearning.com/boundless-biology/chapter/the-light-independent-reactions-of-photosynthesis/

https://youtube.com/playlist?list=PLAE36CEFE9200FDDD

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Calvin_cycle

https://www.frontiersin.org/articles/223603

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Light-dependent_reactions

https://www.frontiersin.org/articles/223603

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Anoxygenic_photosynthesis


3 Comments

Previous Post Next Post