ক্যাপচা - আমি রোবট নই

卂卩ㄒ匚卄卂

The irritating bot Checker 

মুভি দেখতে ইচ্ছে করছে। ব্রাউজারে ঢুকে গেলাম একটা সাইটে। মার্ভেলের নতুন রিলিজ হওয়া মুভি "মাল্টিভার্স অফ ম্যাডনেস" দেখিনি এখনও। ডাউনলোড করতে গেলাম। অমনি সামনে এলো একগাদা ছবি, আর একটা বক্স যেখানে লেখা "I'm not a robot." পাশে টিক মার্ক দেয়ার চেকবক্স। 

মানে কী! মানুষ হয়েও আমাকে এখন  মানুষ হওয়ার প্রমাণ দিতে হবে? ব্যাপারটা ভীষণ বিরক্তিকর না? টাকা দিয়ে ইন্টারনেট কিনেছি, সেই ইন্টারনেট দিয়েই ব্রাউজিং করছি, তাতেও বোঝা যায় না আমি কী? তাছাড়া ফোন চালায় মানুষই, রোবট না হওয়ার প্রমাণ লাগবে কেন?

এমনটা নিশ্চয়ই ওয়েবসাইট ব্রাউজিং এর সময় কখনো আপনার সাথে ঘটেছে এবং অনেকটা বিরক্তি নিয়েই আপনি ছবিগুলো সিলেক্ট করে আপনার রোবট না হওয়ার প্রমাণ দিয়েছেন। এই জিনিসটাকে বলা হয় ক্যাপচা।  ইন্টারনেট চালানোর সময় অনেককেই এই বিরক্তিকর টাস্ক কমপ্লিট করতে হয়। 
ব্যাপারটা আপনার কাছে বিরক্তিকর হতে পারে, কিন্তু আসলে এই জিনিসটাই অনেক ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কীভাবে?

জানা যাক এর আদ্যোপান্ত।

ইংরেজিতে Captcha শব্দটির পূর্ণরুপ হলো Completely Automated Public Turing test to tell Computers and Humans Apart. অর্থাৎ, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষ এবং কম্পিউটারের মধ্যে পার্থক্য যাচাইকরণের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্যাপচা।

ব্রাউজিংয়ের সময় আপনি যে কাজগুলো করছেন সেগুলো আসলে কোনো মানুষ করছে, নাকি বট প্রোগ্রাম দিয়ে করা হচ্ছে তা যাচাই করার জন্যই এই ক্যাপচা। কারণ আজকাল ফোন কিংবা কম্পিউটারে অনেক অ্যাডভান্সড অটোমেটেড প্রোগ্রাম রয়েছে যারা মানুষের সাহায্য ছাড়াই নির্দিষ্ট ইন্সট্রাকশনের কাজ খুব দ্রুতগতিতে করতে পারে। 

ধরুন, একটা মুভি রিলিজ হলো। সেটার টিকেট অনলাইনে একটা সাইটে বিক্রি করা হচ্ছে। টিকেট কেনার জন্য কিছু তথ্য, নাম-পরিচয় দিয়ে মানুষ টিকেট কিনতে পারবে। এই কাজটা করতে একজন মানুষের গড়ে অন্তত ৩-৫ মিনিট লাগবে। আর মুভিটা যেহেতু অনেক হাইপ তুলেছে তাই বেশি দেরি করলে টিকেট ফুরিয়েও যেতে পারে।

এখন, একজন স্ক্যামার চাইলো সে অনেকগুলো টিকেট দ্রুত কিনবে এবং পরে কালোবাজারিতে চড়া দামে বিক্রি করবে। কাজটা সে নিজ হাতেই করতে পারে, অনেকগুলো ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে সেগুলোর তথ্য নিজে ইনপুট দেয়ার মাধ্যমে। কিন্তু কাজটাতে প্রচুর সময় লাগবে। সে বেশি টিকেট কিনতে পারবে না। তাছাড়া কাজটা তার জন্য খুব বোরিং। সারাক্ষণ বসে বসে হাতে টাইপ করতে হবে তাকে। একই কাজ যদি কোনো বট প্রোগ্রাম দিয়ে করা হয়, তাহলে প্রোগ্রাম খুব দ্রুতগতিতে অনেকগুলো টিকেট কিনতে পারবে কারণ প্রোগ্রাম তো আর মানুষের মতো হাত দিয়ে টাইপ করে না। সে দ্রুতগতিতে সব তথ্য ইনপুট দিয়ে অনেকগুলো টিকেট কিনে নেবে। তাহলে, এভাবে অসাধু স্ক্যামাররা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজে বট প্রোগ্রাম ব্যবহার করতে পারে। তাই ওয়েবসাইটে টিকেট বুকিং এর সময় এমন একটা টাস্ক রাখা দরকার, যেটাকে বট প্রোগ্রাম কমপ্লিট করতে পারবে না এবং ফলস্বরূপ কাজটাও শেষ করতে পারবে না। 
ক্যাপচা এই কাজটাই করে। বট শুধু তথ্য ইনপুট দেয়ার জন্য তৈরি। কোন ছবিটা কীসের, কিংবা কোন অক্ষরে কী লেখা আছে, তা চেনার ক্ষমতা তার নেই। তাই এভাবে ক্যাপচার সাহায্যে বট ব্যবহার করে করা অপরাধমূলক কাজ আটকানো সম্ভব।
ইন্টারনেট যুগের প্রথম দিকে স্প্যামাররা বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্ট প্রোগ্রাম দিয়ে নানা অসৎ কাজ করে বেড়াত। সেগুলোকে আটকানোর জন্যই ক্যাপচার জন্ম হয়েছে। 

ক্যাপচা সর্বপ্রথম কে বা কারা ব্যবহার করেছিল সেটা নিয়ে কন্ট্রোভার্সি আছে।
দুটি টিম ক্যাপচাকে নিজেদের সৃষ্টিকর্ম বলে দাবি করে। প্রথম টিম হলো Mark D.Lillibridge, Martín Abadi,  Krishna Bharat, এবং Andrei Broder এর। তারা ১৯৯৭ সালের দিকে AltaVista তে নিজেদের সার্চ ইঞ্জিনে স্প্যাম URL যুক্ত করা ঠেকাতে ক্যাপচা ব্যবহারের দাবি তোলেন। তারা ব্রাউজিংয়ের সময় ইউজারদের কিছু পাজেল সমাধান করতে দিয়েছিলেন যেগুলো কোনো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স করতে পারত না। 
একইসাথে আবার  Luis von AhnManuel Blum, Nicholas J. Hopper, এবং John Langford এর টিম দাবি করে তারাই প্রথম ক্যাপচা এনেছে। সর্বপ্রথম গ্রাফিক্যাল ক্যাপচা ব্যবহার করেছিলেন তারা। দুই টিমই  ১৯৯৭  ও ১৯৯৮ সালে নিজ নিজ পেটেন্ট পাবলিশ করে। তবে Luis von Ahn কেই আধুনিক ক্যাপচার জনক মানা হয়। 

২০০০ সালের পর থেকে বিভিন্ন সাইটে বট প্রোগ্রামের এন্ট্রি আটকানোর জন্য ক্যাপচা পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

ক্যাপচা কীভাবে কাজ করে তা আমরা সবাই কমবেশি জানি। ব্রাউজিংয়ের সময় অন্তত একবার হলেও ক্যাপচার সম্মুখীন হতে হয়েছে ইউজারদের। আমরা যে ক্যাপচাগুলো দেখে থাকি সেগুলোর বেশিরভাগই গ্রাফিক্যাল বা নিউমেরিক ক্যাপচা। তবে এর বাইরে আরো অনেক ধরনের ক্যাপচা আছে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে অনেক অ্যাডভান্সড বট এসেছে যারা ছবি চিনতে পারে কিংবা ম্যাথমেটিক্যাল ক্যালকুলেশন করতে পারে। সেগুলোকে আটকানোর জন্য তাই ক্রমান্বয়ে আরো উন্নত ক্যাপচাও এসেছে। 
 
ক্যাপচার প্রকারভেদ জানা যাক-

Text Captcha 

টেক্সট ক্যাপচায় সাধারণত কিছু আঁকাবাঁকা অক্ষর দেয়া থাকে। তা হতে পারে কোনো কিছুর নাম বা র‍্যান্ডম কোনো ওয়ার্ড। এই অক্ষরগুলো একটি নির্দিষ্ট বক্সে লিখে সাবমিট করতে হয় অথবা I'm not a robot লেখাযুক্ত বক্সে টিক চিহ্ন দিতে হয়। অক্ষরগুলো সাধারণ বোধগম্য ফন্টে না রেখে ক্যালিগ্রাফিক ফন্টে লেখা থাকে যাতে বট প্রোগ্রাম লেখা সহজে বুঝে ফেলতে না পারে। এটি সবচেয়ে পুরোনো ক্যাপচা পদ্ধতির একটি এবং এটা ক্র‍্যাক করার মতো বট এখন আছে। তাই এগুলো ব্যবহার করা হয় কম প্রাইভেসিযুক্ত সাইটে। 

Mathematical Operation 

এসব ক্যাপচায় কোনো গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে দেয়া হয়। যেমন 2*2=? বা 3+5×6=? ইত্যাদি দেয়া থাকে। সমাধান করে নির্দিষ্ট উত্তর যথাস্থানে লিখে ক্যাপচা পূরণ করতে হয়। টেক্সট ক্যাপচার মতোই অক্ষরগুলো এখানেও সাধারণ নিউমেকরিক ফন্টে থাকে না, আঁকাবাঁকা থাকে অনেক সময়। এই ক্যাপচাও সহজে পূরণ করার মতো বট প্রোগ্রাম আছে বর্তমানে।

Sound Identification 

এই ক্যাপচায় আপনাকে নির্দিষ্ট কোনো বাক্য বা শব্দ শোনানো হয়। শুনে সঠিক স্পেলিং সহ সেগুলো বক্সে লিখতে হবে। স্পেলিং ভুল হলে ক্যাপচা পূরণ হবে না। সাউন্ড সাধারণ স্পিডে না দিয়ে 1.5x বা 2x স্পিডে দেয়া থাকে ক্যাপচাকে আরেকটু কঠিন করার জন্য। কিংবা কোনো সাউন্ড ফিল্টারও ব্যবহার করা হতে পারে।

Picture Identification 

এই ক্যাপচাই বর্তমানে আমরা সবচেয়ে বেশি দেখে থাকি। এতে নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক কিছু ছবি দেয়া হয়। অনেকগুলো ছবি থেকে সেই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত সঠিক ছবিগুলো বাছাই করতে দেয়া হয়। যেমন আপনাকে ছয়টি ছবি দেয়া হলো। যেখানে তিনটি বাইকের ছবি এবং তিনটি ভিন্ন কোনো বস্তুর ছবি আছে। সঠিক ছবি অর্থাৎ বাইকের ছবিগুলো বেছে নিতে হবে। ভুল কোনো ছবি গ্রহণযোগ্য হবে না। এই ধরণের ক্যাপচাকে আরো নিরাপদ করে তুলতে খুব ছোট অবজেক্ট বা একটি অবজেক্টকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে শুধু নির্দিষ্ট কিছু অংশ বেছে নিতে বলা হয়। যেমন রাস্তা থেকে শুধুমাত্র ক্রসওয়াকের ছবিগুলো বেছে নিতে দেওয়া হয়। অনেক সময় খুব ছোট আর লো রেজুল্যুশনের ইমেজ দেয়া হয়, যেগুলো বট তো বটেই, মানুষের পক্ষেই বোঝা কষ্টকর। তাই এই ক্যাপচাটি মোটামুটি সুবিধাজনক ও আধুনিক ক্যাপচা।

Sweet Recaptcha 

এটায় পাজেল দেয়া থাকে। ইউজারকে একটি ছবির কিছু এলোমেলো অংশ দেয়া হয়, সেগুলো ড্র‍্যাগ করে ছবিটি মেলাতে হয়। অথবা ক্যাপচার পাশে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ছবির পজিশন চেঞ্জ করতে হয়। পিকচার আইডেন্টিফিকেশন পদ্ধতির আধুনিক ভার্সন এটি, এবং সারারণ পিকচারের তুলনায় বেশি কার্যকর। 

Honeypot 

আধুনিক ক্যাপচাগুলোর মধ্যে হানিপট কিছুটা উন্নত ক্যাপচা । আগের তিনটি ক্যাপচা পদ্ধতিকে ওভারকাম করার মত বট তৈরি হয়েছে। কিন্তু এত বুদ্ধিমান প্রোগ্রামও হানিপটকে সহজে অতিক্রম করতে পারে না। এই পদ্ধতিতে দৃশ্যমান বক্সের পাশাপাশি কিছু অদৃশ্য বক্স দেয়া থাকে। কোনো মানুষ যখন ক্যাপচাটি পূরণ করবেন তখন তিনি শুধুমাত্র দৃশ্যমান ঘরগুলো পূরণ করবেন কারণ তার চোখে অদৃশ্য ঘর ধরা পড়ে না। কিন্তু একটি বট অদৃশ্য ঘরও পূরণ করে ফেলে কারণ সে সেগুলোকে চিহ্নিত করতে পারে এবং অন্য ঘরের মতোই সাধারণ ঘর মনে করে। ফলে বট ধরা পড়ে যায়।

No Captcha Recaptcha 

এটি গুগলের ডেভেলপ করা অত্যাধুনিক একটি ক্যাপচাপদ্ধতি। এক্ষেত্রে আলাদা কোনো টাস্ক থাকে না। শুধু I'm not a robot লেখাযুক্ত একটি সাধারণ চেকবক্স থাকে। ক্লিক করে টাস্ক পার হয়ে গেলে মনে হতে পারে এটা আসলে কোনো ক্যাপচাই না। কিন্তু না, এর মধ্যে ট্রিক লুকোনো আছে। বট প্রোগ্রাম চেক্সবক্সে টিক দেয়ার সময় ঠিক মাঝখানে ক্লিক করে যেটা মানুষের পক্ষে করা একেবারেই সম্ভব না। ফলাফলস্বরুপ, বট ধরা পড়ে যায়। তাই এটা বহল ব্যবহৃত ক্যাপচাগুলোর একটি।

Invisible Recaptcha 

বর্তমানে প্রচলিত ক্যাপচাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ আর আধুনিক ক্যাপচা হলো ইনভিজিবল রিক্যাপচা। এই পদ্ধতিতে ওয়েবসাইট ব্রাউজিংয়ের সময় ইউজারকে কোনো কিছু আইডেন্টিফাই করতে হয় না, বরং ক্যাপচা নিজেই ইউজার চিহ্নিত করে। ব্রাউজকৃত সাইটের কোণায় বা নির্দিষ্ট স্থানে ছোট করে এই ক্যাপচার একটি লোগো থাকে। এর কাজ ব্যবহারকারীর গতিবিধির উপর নজর রাখা। অর্থাৎ এটি এমনভাবে প্রোগ্রাম করা, যাতে ওয়েবসাইট নিজেই বট চিহ্নিত করতে পারে। মানুষের চেয়ে বটের মুভমেন্ট খুব দ্রুত হয়, ফলে সহজেই ধরে ফেলা যায়। যেমন ধরা যাক কোনো সাইটে জরিপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেউ চায় নির্দিষ্ট পক্ষকে জেতাতে। সে এক্ষেত্রে বট ব্যবহার করে খুব দ্রুত অনেকগুলো জাল ভোট দিতে পারবে। এমন অবস্থায় যদি সাইটে এই ক্যাপচা থাকে, তাহলে ভোটিং এর গতির ধরন দেখে বটের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারবে। এভাবেই ইনভিজিবল রিক্যাপচা প্রোগ্রামের উপস্থিতি ধরতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

সুতরাং বোঝা গেল, যে ক্যাপচা আমাদের অনেকের কাছে বিরক্তিকর বিষয়, সেটাই ইন্টারনেটকে অনেকাংশে সিকিউর রাখে। গুরুত্বপূর্ণ সাইটকে স্প্যামিং এর হাত থেকে বাঁচায়। যদিও বট প্রোগ্রাম দিন দিন উন্নত হচ্ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে নতুন নতুন ক্যাপচাও উদ্ভাবিত হচ্ছে এবং ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

ইন্টারনেটকে নিরাপদ রাখা ক্যাপচার প্রতি তাই বিরক্তি প্রকাশ না করে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত আমাদের।

হ্যাপি ব্রাউজিং।


References:



Post a Comment

Previous Post Next Post