প্রাচীন সমুদ্রের ত্রাস মেগালোডন

Megalodon


প্রায় ২৭-২৮ মিলিয়ন বছর আগের কথা।

সমুদ্রের বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানান প্রাগৈতিহাসিক দানব। তাদের একটাই কাজ, খাওয়া আর খাওয়া। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরছে তারা। চিবিয়ে খাচ্ছে একে অপরের হাড়গোড়। দানবীয় ভোজন বিলাস আর শিকার চলছে সমুদ্রের বুকে।

সব দানবের মাঝে রাজত্ব করছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগের অন্যতম ভয়ানক শিকারী, মেগালোডন। সেই সময়ের অন্যতম ভয়ানক ও হিংস্র জীব, সমুদ্রের সম্রাট। যার বিশাল দাঁতের সম্মুখে যেকোনো প্রাণীর হাড়--মাংস নিমিষেই গুঁড়িয়ে যেত, পাউডারের মত।

আজকের আধুনিক পৃথিবীতেও শার্ক আমাদের কাছে অনেক পরিচিত। শব্দটি শুনলে আমাদের চোখে ভেসে উঠে বিশাল ধারালো দাঁতওয়ালা হাঙরের ছবি। হিংস্র এই প্রাণীর কথা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে।

শার্করা এই পৃথিবীতে এসেছিল আজ থেকে প্রায় ৪২০ মিলিয়ন বছর আগে। কোটি বছরের বিবর্তনে তারা আকারে অনেক বড় ও বুদ্ধিমান হয়ে উঠে। পরিণত হয় তাদের সময়ের অন্যতম সফল ও হিংস্র শিকারীতে। কালের পরিক্রমায় জন্ম হয় তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে হিংস্র দানব মেগালোডনের। মেগালোডন ছিল বর্তমান শার্কের তুলনায় অনেকগুণ বড় ও হিংস্র, তার সময়ে সে ছিল সমুদ্রের রাজা।

শ্রেণিবিন্যাস-

Kingdom:Animalia
Phylum:Chordata
Class:Chondrichthyes
Superorder:Selachimorpha
Order:Lamniformes
Family:Otodontidae
Genus:Otodus
Species:
O. megalodon

মেগালোডন সবচেয়ে বিখ্যাত তার দাঁতের জন্য। সে তার নামটিও পেয়েছে এই দাঁত থেকেই। Megalodon  শব্দের অর্থ বিশাল দাঁত।

প্রায় সাত ইঞ্চি লম্বা ২৭৬ টি দাঁতের পাঁচটি সারি মিলে গঠিত হতো বিশাল চোয়াল। এই চোয়ালের এক হা এর দৈর্ঘ্য একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সমান। মুখ যার এত বড়, শরীরটা তার কত বিশাল হবে, অনুমান করা যায় সহজেই। একেকটি মেগালোডন প্রায় ২০ মিটার (৬৬ ফুট প্রায়) লম্বা হতো।

একটি পূর্ণবয়স্ক মেগালোডনের ওজন ছিল ৩০-৬৫ টন। পেছনে থাকা বিশাল লেজ তাকে এই বিরাট শরীর নিয়েও দ্রুত বেগে ছুটতে সাহায্য করত। গতি ছিল সেকেন্ডে ৫ মিটার। সাঁতারের সময় তার সামনের বিশাল দুটি পাখনার সাহায্যে ব্যালেন্স ধরে রাখত। মেগালোডন সেই সময়ের সবচেয়ে বড় শিকারীদের মধ্যে অন্যতম। ছোটখাট তিমি থেকে শুরু করে কচ্ছপ পর্যন্ত অনায়াসে সাবাড় করে দিত সে। বিশাল দাঁতগুলোর হাত থেকে শিকারের রক্ষা পাওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। পাশাপাশি ছিল তীক্ষ্ম ইলেকট্রিক সেন্স, যার সাহায্যে শিকারের নড়াচড়া, গতিবিধি খুব সহজে বুঝতে পারত।

এত শক্তি নিয়েও মেগালোডন  আজীবনের জন্য টিকে থাকতে পারেনি। আজ থেকে প্রায় ২.৬ মিলিয়ন বছর আগে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে এই পৃথিবী থেকে।
মেগালোডনের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে কিছু ফ্যাক্টর জড়িত। সমুদ্রের তাপমাত্রা ক্রমাণত হ্রাস পাওয়ায় তাদের খাবার, যেমন সামুদ্রিক কাছিমরা বিলুপ্ত হতে শুরু করে। এতে খাবারের অভাব দেখা দেয়। বাকি যে প্রাণীগুলো বেঁচে ছিল তা শিকারের জন্য মেগালোডন তার সমসাময়িক অন্যান্য শার্ক ও খুনে তিমিদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি। ফলে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে দাঁতালো দানবরা।

মেগালোডন শার্ক হারিয়ে গেলেও তাকে নিয়ে গল্প ও কৌতূহলের শেয নেই। রচিত হয়েছে অনেক উপন্যাস, নির্মিত হয়েছে বেশকিছু সিনেমা। দ্যা ট্রেঞ্চ, আ নভেল অফ ডিপ সি টেরর প্রভৃতি উপন্যাসে মেগালোডনকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। বিবিসির সি মন্সটার্স ডকুমেন্টারিতে একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে মেগালোডন। এসবের পাশাপাশি বর্তমানে মেগালোডন নিয়ে অনেক গুজব প্রচলিত রয়েছে। কিছু লোকের ধারণা, এখনও মেগালোডন পৃথিবীতে টিকে আছে। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত পৃথিবীর গভীরতম খাত মারিয়ানা ট্রেঞ্চের অতল গভীরে মেগালোডন আজও বাস করে বলে দাবি করে কেউ কেউ, কিন্তু তার কোনো প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। সকল রেকর্ডস অনুসারে এটাই নিশ্চিত যে প্রাগৈতিহাসিক যুগের এই খুনিরা আজ থেকে প্রায় ২.৬ মিলিয়ন বছর আগে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এদের খুব কাছের আত্মীয় গ্রেট হোয়াইট শার্ক এখনও পৃথিবীতে বিচরণ করছে।

প্রাগৈতিহাসিক জীবদের মাঝে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে মেগালোডন।
সমুদ্রের দানবদের তালিকায় সবার আগে উঠে আসবে এই দানবের নাম।তার রাজত্বের কথা লেখা থাকবে প্রাচীন পৃথিবীর ইতিহাসের পাতায়।


References -



Dk Dinosaurs 

সায়েন্সভেঞ্চার- নাঈম হোসেন ফারুকী

Post a Comment

Previous Post Next Post