মেঘমালার সাতকাহন
গ্রীষ্মের দুপুরে মাথার উপর স্বচ্ছ নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় বিশাল বিশাল মেঘের ভেলা। বর্ষায় থাকে নিকষ কালো মেঘ, শরতে পরিষ্কার আকাশে মেঘেরা ভেসে বেড়ায় পেঁজা তুলোর মত। নানান সময়ে নানান ধরনের মেঘেদের আনাগোনা থাকে নীল আকাশজুড়ে। বিভিন্ন অদ্ভূত আকৃতির মেঘ দেখা যায় পুরো বছরে।
এই সব মেঘেদের সুন্দর নাম আছে। আকার, আকৃতি, রংয়ের উপর ভিত্তি করে মেঘের অনেক শ্রেণি রয়েছে।
কোনো গ্রহ বা উপগ্রহের আবহমন্ডলে ভাসমান জলক্ণার সমষ্টিকে মেঘ বলা হয়। মার্ধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে আকৃষ্ট ধূলিকণা এবং গ্যাসীয় পদার্থের স্তূপকেও মেঘ বলা যেতে পারে, যেমন আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘ। সাধারণ ভাষায় আমরা মেঘ বলতে যা বুঝি সেগুলো হলো পৃথিবীতে মাথার উপর ভাসমান বিশাল সাদা খন্ড।
বায়ুর জলীয় বাষ্প যখন ক্রমশ উপরে উঠে, একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে শীতলতার স্পর্শে তা ঘনীভূত হয়। ঘনীভবনের ফলে ক্ষূদ্র ক্ষূদ্র জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়। এর সাথে মিশে থাকে বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা ও নানা গ্যাসীয় বস্তুপুঞ্জ। এসব একসাথে মিশে গিয়ে সৃষ্টি করে বিশাল ভাসমান মেঘ।
মেঘ নিয়ে গবেষণার জন্য Nephology বা মেঘবিজ্ঞান নামে বিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখাও রয়েছে। যেখানে শুধুমাত্র মেঘ, মেঘের ধরন, উৎপত্তি ইত্যাদি নিয়েই গবেষণা করা হয়।
মেঘের শ্রেণিবিভাগ-
নানান রং ও আকৃতি নিয়ে ভেসে বেড়ানো মেঘমালাকে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।
মেঘের শ্রেণিবিন্যাস করার ক্ষেত্রে মূলত চারটি Property (বৈশিষ্ট্য) বিবেচনায় আসে।
1. Height (উচ্চতা)-
উচ্চতার ভিত্তিতে প্রধানত তিনটি শ্রেণি
হিসাব করা হয়। Low-level (নিম্ন
উচ্চতা), Mid-level (মধ্যম উচ্চতা) ও
High-level (বেশি উচ্চতা) অনুযায়ী
মেঘমালাকে বিন্যস্ত করা হয়।
2. Colour (রং)-
বিভিন্ন ঋতুতে মেঘেরা নানান রং ধারণ
করে, তাই রংয়ের ভিত্তিতেও তাদের বিন্যস্ত করা যায়।
3. Shape (আকৃতি)-
আকৃতির ভিত্তিতে বড়-ছোট মেঘেদের শ্রেণিবিভাগ রয়েছে।
4. Weather (আবহাওয়া)-
অনেক সময় মেঘের উপস্থিতি আর রং-রূপ দেখেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া যায়। তাই কোন মেঘ কেমন আবহাওয়া নির্দেশ করে তার ভিত্তিতেও মেঘের শ্রেণিবিভাগ রয়েছে।
মেঘেদের বিন্যস্ত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ ও গৃহীত পদ্ধতি উচ্চতার ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ। এই পদ্ধতিতে তিনটি শ্রেণিতে মেঘের আরো অনেকগুলো উপশ্রেণি রয়েছে। বেশি, কম ও মধ্যম উচ্চতায় বিন্যস্ত এই বিন্যাস।
High-level Clouds
(অধিক উচ্চতার মেঘমালা)
Range-(5-13 km)-
Cirrus Clouds-
Cirrus হলো খুবই সাধারণ প্রকৃতির মেঘ যা প্রায় পুরো বছরব্যাপীই দেখতে পাওয়া যায়। মেঘগুলোর স্তর পাতলা, ছিপছিপে, স্বচ্ছ এবং প্রখর উজ্জ্বল হয়। এই মেঘমালা সাধারণত বরফের ক্রিস্টাল দ্বারা তৈরি হয়। মেঘের তাপমাত্রাই নির্ধারণ করে মেঘগুলো কতটুকু স্বচ্ছ হবে। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় এরা উজ্জ্বল হলুদ অথবা লাল রং ধারণ করে। দিনের আলোয় তাদের সাদা পালকের মত দেখায়।Cirrus মেঘেরা পরিষ্কার আকাশ নির্দেশ করে এবং এই মেঘগুলো থাকাবস্থায় বৃষ্টিপাত হয় না।
Cirrocumulus Clouds-
এই ধরনের মেঘ সাধারণত ভূমি হতে ৫ কি.মি. এর বেশি উচ্চতায় সৃষ্টি হয়। এরা ছোট কেশগুচ্ছের ন্যায় প্যাটার্নে বা হালকা গোলাকার স্তূপে আকাশে মাইলের পর মাইলব্যাপী ভাসমান অবস্থায় থাকে। মেঘগুলো প্রায়ই ধূসর রং ধারণ করে। মাঝেমধ্যে এদেরকে Cumulus বা Altocumulus মেঘের সাথে গুলিয়ে ফেলে অনেকে। Cirrocumulus এর কোনো শেডিং থাকে না এবং Altocumulus এর কিছু অংশ বাকি অংশের চেয়ে গাঢ় হয়।
Cirrocumulus মেঘগুলো সাধারণত
Cirrus মেঘের পর আসে। এরাও পরিস্কার আবহাওয়া প্রদর্শন করে।
Cirrostratus Clouds-
এই মেঘেরা আকাশে সাদা ফিনফিনে চাদরের মত বিস্তৃত থাকে, যেন মনে হয় বিশাল এক কম্বল পুরো আকাশকে আবৃত করে রেখেছে। এদের রং সাধারণত উজ্জ্বল ধূসর বা সাদা প্রকৃতির হয়। এই মেঘগুলো খুব সুন্দরভাবে আলো প্রতিফলিত করতে পারে, ফলে এমন মেঘে হ্যালো ইফেক্ট বা বলয়প্রভা দেখা যায়। Cirrostratus মেঘগুলো সাধারণত বৃষ্টির পূর্বাভাস নির্দেশ করে। এই মেঘ দেখা যাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বৃষ্টির পরেও এই ধরণের মেঘ আবির্ভূত হতে পারে এবং রামধনু সৃষ্টি করে।
Mid-level Clouds
(মধ্যম উচ্চতার মেঘমালা)
Range-(2-7 km)-
Altocumulus Clouds-
এই মেঘ হেমন্ত ও শীতে বেশি দেখা যায়। আলোকচিত্রীদের জন্য এরা খুবই আকর্ষণীয় বস্তু। তাদের সৌন্দর্য সবাইকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করে। Altocumulus মেঘগুলো সাধারণত মধ্যম উচ্চতা থেকে বেশি উচ্চতার দিকে সৃষ্টি হয়। ছোট ছোট গোলাকৃতির এই মেঘগুলো দেখতে ভীষণ সুদৃশ। এগুলো সৃষ্টি হয় বড় মেঘ ভেঙে গিয়ে।এরা জলকণা ও বরফ ক্রিস্টালের মিশ্রণে তৈরি। ছোট ছোট গোল গোল আকৃতিতে পুরো আকাশকে ঘিরে রাখে। মনে হয় ছেঁড়া পাকানো তুলোর গুটির মতো। শীতকালে এদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ঝড়ো হাওয়ায়ও এসব মেঘ সৃষ্টি হতে পারে।
Altostratus Clouds-
বিশালাকৃতির এই মেঘগুলো মাইলব্যাপী বিস্তৃত থাকে। হালকা বৃষ্টির সময় এদের দেখা যায়। এই জাতীয় মেঘের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জলকণা থাকে, যা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এদের রং সাধারণত ধূসর বা নীলাভ হয়ে থাকে। অস্পষ্ট চাদরের মত পুরো আকাশে বিস্তৃত থাকে তারা। এমন মেঘ থেকে অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টি হতে পারে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সময় এদের বেশি দেখা যায়। এরা সূর্যরশ্মিকে ঢেকে দিতে পারে এবং আকাশকে কিছুটা অন্ধকার করে তোলে।
Nimbostratus Clouds-
এই মেঘের নামের প্রথম অংশ এসেছে ল্যাটিন শব্দ Nimbus থেকে যার অর্থ বৃষ্টি এবং শেষ অংশ এসেছে Stratus থেকে, যার অর্থ হলো ছড়িয়ে পড়া। যেসব মেঘে বৃষ্টি হয় তাদের নামের সাথে Nimbo শব্দটি জড়িয়ে থাকে। এগুলো এমন ধরনের মেঘ যারা প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এরা সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দেয়। বৃষ্টির সময় এই মেঘেরা কালো অন্ধকারে পুরো আকাশকে ঢেকে ফেলে। বর্ষাকালে এদের দেখা বেশি মেলে। বৃষ্টির সময় জলকণা অত্যধিক ঘনীভূত হয়ে যেকোনো ধরনের মেঘ থেকেই এমন মেঘ তৈরি হতে পারে। মধ্যম উচ্চতায় সৃষ্টি হলেও মাঝে মাঝে তাদের নিচে নেমে আসতে দেখা যায়।
Low-level Clouds
(নিম্ন উচ্চতার মেঘমালা)
Range-(upto 2 km)-
Stratus Clouds-
Stratus মেঘগুলো পাতলা স্তরবিশিষ্ট মেঘ, যারা পুরো আকাশকে ঘিরে রাখে। অনেকটা কুয়াশার মতই এরা, তবে কুয়াশা থেকে একটু বেশি ঘনীভূত হয়ে মেঘের আকার ধারণ করে। এই মেঘেদের বিশেষ কোনো আকৃতি নেই, এরা স্তরে স্তরে পুরো আকাশব্যাপী বিস্তৃত থাকে। সাধারণত ধূসর বা সাদা বর্ণের হয়। এরা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত ঘটায়। যদি প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা ধারণ করতে পারে, তাহলে এরা Nimbostratus মেঘে পরিণত হয় এবং তুমুল বৃষ্টিপাত ঘটায়।
Cumulus Clouds-
শরতকালের পেঁজা তুলোর মতো মেঘ কে না পছন্দ করে! এই মেঘেরা অনেক কবিতা, গল্প, উপন্যাসে জায়গা পেয়েছে। দেখতে তুলোর স্তূপের মত এই মেঘগুলো Cumulus মেঘ। Cumulus শব্দের অর্থ স্তূপ। কখনো কখনো এই মেঘেদের নিচের অংশ সমতল এবং উপরের অংশ ফুলকপির মত দেখায়। এরা পরিষ্কার, নির্মল আবহাওয়া প্রদর্শন করে। শরতের আকাশ এদের জন্যই এত পরিষ্কার এবং সুন্দর দেখায়। এই মেঘে সচরাচর বৃষ্টি হয় না। অনেক সময় এরা একসাথে জড়ো হয়ে Cumulonimbus মেঘে পরিণত হতে পারে। তখন বৃষ্টিপাত ঘটায়।
Cumulonimbus Clouds-
গ্রীষ্মের শেষে বা বর্ষাকালে এই মেঘ বেশি দেখা যায়। বিশাল পর্বতের ন্যায় স্তূপীকৃত মেঘগুলো নিম্ন উচ্চতা বা মধ্যম উচ্চতায়ও সৃষ্টি হতে পারে। এই মেঘে প্রচুর পরিমাণে জলকণা থাকে, বেশি উচ্চতায় জন্ম নিলে বরফের কণাও থাকে। এদের তলদশ কালো হয়। এসব মেঘেরা বজ্রসহ তুমুল বৃষ্টিপাত ঘটায়, কখনো কখনো শিলাবৃষ্টিও ঘটাতে পারে। আকাশে তারা প্রবল গর্জন তোলে। কালবৈশাখীর সময় উত্তর-পশ্চিম আকাশে বিচরণ করে এরা। কোথাও এদের দেখতে পেলেই বুঝতে হবে সেখানে অপেক্ষা করছে বজ্রসহ বৃষ্টি।
Stratocumulus Clouds-
এই মেঘগুলো পুরু তুলো বের হয়ে আসা কম্বলের ন্যায় দেখতে। এরা Cumulus মেঘেরই অনুরূপ, তবে আকার-আকৃতিতে অনেক বড়। এই মেঘের তলদেশ অনেকখানি সমতল এবং উপরের অংশ ছিন্ন তুলোর মত দেখায়। পুরুত্বের উপর ভিত্তি করে এরা সাদা, ধূসর বা গাঢ় ধূসর রঙের হতে পারে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে হেমন্ত বা শীতে এদের দেখা মেলে। Altocumulus মেঘ ভারী হয়ে নিচে নেমে এলে এমন মেঘ সৃষ্টি হয়। আকাশে অধিক ঘনত্বে জমলে বৃষ্টিপাতও হতে পারে।
এটুকু পর্যন্ত সব মেঘই মোটামুটি সাধারণ মেঘ এবং পুরো বছরজুড়েই তাদের দেখা পাওয়া যায়। এর বাইরেও আরো কিছু অদ্ভূত ও বিরল মেঘ আছে যেগুলো সচরাচর দেখা যায় না। ভাগ্যক্রমে কোনো বিশেষ মুহূর্তে তারা দেখা দেয়। এমন বিরল মেঘেদেরও বাহারি সব নাম দিয়ে রাখা হয়েছে আলাদা শ্রেণিতে।
Aspiretus Clouds-
এই মেঘেরা দেখতে উল্টানো সারি সারি পর্বতের মতো। যেন বিশালাকার পর্বতমালাকে আকাশে উলটো করে ঝুলিয়ে রেখেছে কেউ। উঁচু পর্বতশৃঙ্গের আকৃতিতে এর নিচের অংশ সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়। এদের সবচেয়ে সুন্দর রূপ দেখা যায় গোধূলির আলোয়। লালচে আভায় তাদের জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির মতো দেখায়। তাই এদের অপর নাম Clouds from Hell.
Lenticular Clouds -
এই অদ্ভূত মেঘগুলো তৈরি হয় পাহাড়ি এলাকায়। বাতাসের গতিপথ কোনো পর্বত অতিক্রম করার সময় বাধা পেয়ে গতির তারতম্যের কারণে এমন ডিম্বাকৃতি মেঘের সৃষ্টি হয়। এসব মেঘই অনেক ক্ষেত্রে ভিনগ্রহীদের যান বা ইউএফওকেন্দ্রিক গুজবের ভিত্তি। তাদের আকৃতি দেখতে অনেকটাই কাল্পনিক ইউএফওর মত। গোধূলির সময় বর্ণিল আলোয় রাঙানো মেঘেদের দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে সত্যিই যেন ভিনগ্রহের কোনো পর্যটক তার বাহন নিয়ে বেরিয়েছে পৃথিবী ভ্রমণে।
Nacreous Clouds-
Nacreous clouds পৃথিবীর সবচেয়ে বিরল মেঘের মধ্যে অন্যতম। এদের Polar Stratospheric Clouds নামেও ডাকা হয়। মেরু অঞ্চলে এই মেঘের দেখা পাওয়া যায়। অতিরিক্ত ঠান্ডা তাপমাত্রায় বরফখন্ড দ্বারা লম্বালম্বিভাবে গঠিত হয় এই মেঘ। ঘনত্ব অত্যধিক হওয়ায় এরা দুধের ন্যায় শুভ্র। মেঘগুলোকে শীতের আকাশে বিছানো লম্বা সাদা চাদরের মত দেখায়। তাদের অবস্থান হয় দিগন্তরেখার উপরে।
Roll clouds-
অদ্ভূত সুন্দর মেঘ এরা। লম্বা প্যাঁচানো রোলের মত বিস্তৃত এই মেঘেদের দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। অপূর্ব এই মেঘগুলো ঝড়ের সময় সৃষ্টি হয় এবং প্যাঁচানো বেলনের আকৃতি ধারণ করে। দেখে মনে হয় কেউ যেন মুড়ে রেখেছে বিশাল মেঘের পাটি, শীতলপাটি মুড়ে রাখলে যেমন দেখায় ঠিক তেমন। অথবা মনে হতে পারে আকাশের বিছানায় বিছানো আছে বিশাল মেঘের কোলবালিশ। রোলের মত দেখতে, তাই এদের বলা হয় Roll Clouds.
Shelf Clouds-
এই মেঘেরা Roll Clouds এর সহোদর। Roll মেঘেদের মত এরাও আকাশে লম্বা ট্রেনের ন্যায় বিস্তৃত থাকে। তবে তারা ঠিক প্যাঁচানো নয়, বরং চ্যাপ্টা পাউরুটির মতো দেখতে। অনেক সময় একাধিক স্তরেও বিন্যস্ত হতে পারে। দেখে মনে হয় পাউরুটির ফালির মত মেঘের ফালিগুলোকে একটির উপর একটি করে সাজিয়ে রেখেছে কেউ। বিরল এই মেঘগুলো তাদের সহোদর মেঘের মতই দেখা দেয় তীব্র ঝড়ের সময়ে।
Virga-
এরা প্রকৃতপক্ষে আলাদা কোনো মেঘ নয়, বরং মেঘের অংশ। Virga খুবই বিরল একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। এটি এমন পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয়, যখন কোনো মেঘের একটি নির্দিষ্ট অংশ ঘনীভূত হয়ে নিচে পড়তে থাকে কিন্তু মাটিতে পৌছানোর আগেই বাষ্পীভূত হয়ে যায়। এই অবস্থায় পড়তে থাকা মেঘের অংশগুলোকে দেখতে লেজের মত দেখায়, মনে হয় যেন নিচে ঝুলে আছে মেঘের লেজ। মেঘের নিচে ঝুলন্ত অংশগুলোকে দেখতে অনেকটা জেলীফিশের মত দেখায়। তাই এদের বলা হয় আকাশের জেলীফিশ।
Mammatus Clouds-
অনেক সময় বৃষ্টির আগে আকাশে নারিকেলের মালার মত ঝুলন্ত বিন্যাসের মেঘ দেখতে পাওয়া যায়। এরা মূলত Cumulonimbus মেঘের অংশ। এই মেঘের কিছু অংশ গুচ্ছ গুচ্ছ প্যাটার্নে মূল মেঘ থেকে বেরিয়ে এসে Mammalus উপপ্রজাতি গঠন করে। মেঘগুলোর আকৃতি স্তনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই তাদের নাম Mammalus. এরা দেখা দেয় বৃষ্টির আগমূহূর্তে। বিশাল গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ সারিবদ্ধভাবে ঘনীভূত হয়, তীব্র গর্জনে জানিয়ে দেয় বৃষ্টির আগমনী সুর।
Fallstreak Holes -
Fallstreak Holes একটি দুর্লভ প্রাকৃতিক বিস্ময়। মেঘের বিস্তীর্ণ চাদরের মাঝে গর্ত, যা দেখে অবাক হতে হয়। গর্তগুলো ছোট, বড় যেকোনো আকৃতির হতে পারে। খুব বিরল ক্ষেত্রে মেঘের বুক চিরে লম্বা দু ফালিতে বিভক্ত হতে দেখা যায়। নিচুস্তরের মেঘেদের কিছু অংশ বাষ্পীভূত হয়ে মেঘের মাঝে এমন গর্তের সৃষ্টি হয়। দেখে মনে হয় যেন ছুরি দিয়ে মাঝখান থেকে কিছুটা মেঘ কেটে নিয়েছে কেউ।
Kelvin Helmholtz clouds-
তরঙ্গায়িত বিন্যাসের মেঘ বিরল প্রকৃতির মেঘেদের মধ্যে অন্যতম। অনেক সময় মেঘেরা তরঙ্গের মত বিন্যাসে আকাশে সজ্জিত থাকে। যাকে বলা হয় Kelvin Helmholtz wave instability. এই ধরনের বিন্যাসে সারি সারি মেঘ তরঙ্গের পর্বতের ন্যায় বিন্যস্ত থাকে। মেঘের এমন বিন্যাস খুবই দুর্লভ। নিচু মেঘগুলো বায়ুপ্রবাহের তীব্রতায় সুসজ্জিত হয়ে এমন সুন্দর আকৃতি তৈরি করতে পারে। এসব মেঘ শুধু পৃথিবীতেই নয়, আমাদের সৌরজগতের জ্যোষ্ঠ্য গ্রহ বৃহস্পতির গ্রেট রেড স্পটেও দেখতে পাওয়া যায়।
Supercell Storm Clouds-
মেঘের তালিকার সবচেয়ে অদ্ভূত মেঘ সম্ভবত এরা। আকৃতি ও গঠনে যারা সবার চেয়ে বিচিত্র ও অনন্য। এরা এক ধরনের বজ্র মেঘ। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সময় এই ধরনের চাকতির মত দেখতে মেঘের দেখা মিলে। দেখতে যত সুন্দর, ততই ভয়ানক তার আচরণ। তীব্র গর্জন ও কান ফাটানো শব্দে এই মেঘের বজ্রপাত কাউকে তার ধারেকাছে ঘেষতে দেবে না। কালো চাকতির ন্যায় মেঘের খন্ডগুলোর সজ্জিত অবস্থান দেখে অবাক না হয়ে উপায় নেই। এ যেন প্রকৃতির এক অপার লীলা। কেউ কেউ এই মেঘকে অলৌকিক বস্তু মনে করে থাকে।
অদ্ভূত মেঘেদের কথন শেষ হবার নয়। প্রাকৃতিক বিস্ময়ের একটি চমকপ্রদ উপাদান মেঘ, যারা আকাশের বুকে প্রকৃতির খেলা দেখায় প্রতিনিয়ত। এসব বিস্ময় মানুষের মনে আজো জন্ম দেয় সীমাহীন কৌতূহলের। প্রকৃতিতে কত রকমের অদ্ভূত ঘটনাই যে ঘটতে পারে, মেঘেরা তার সুষ্পষ্ট উদাহরণ। যতই দেখব এই প্রকৃতিকে, ততই বেড়ে যাবে বিস্ময়, ছড়িয়ে পড়বে মুগ্ধতা। ততই স্পষ্ট হবে প্রকৃতির কাছে আমাদের ক্ষূদ্রতা।
References -
Tags:
ভূগোল ও পরিবেশ