ঘ্রাণ - All about Smell

All About Smell

১.
ইশ! কী পঁচা! এত তাড়াতাড়ি পঁচবে ভাবিনি। এতগুলো ফল, সবই ফেলে দিতে হলো। 

২.
কলিংবেল বাজছে। লোকটা তবুও দরজা খুলছে না। করছেটা কী?

-এখানে শফিক সাহেব থাকেন না?
-হ্যাঁ, কিন্তু দুদিন ধরে তো উনাকে বেরুতে দেখিনি। 
জানালা দিয়ে উঁকি দিতে গিয়ে নাক সিঁটকালাম। নিশ্চয়ই কিছু একটা গড়বড় হয়েছে৷ দরজা ভাঙতে হবে।

৩.
কদিন ধরে গোসল করিসনি? ব্যাটা খাটাশ! 

উপরের তিনটা ঘটনা। 
কোনোটাতেই পরিস্থিতি টের পাওয়ার জন্য কিছু স্পর্শ করতে হয়নি। তাহলে টের পেলাম কী করে? নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন। ফল পঁচা, ভেতরে লাশ থাকার সম্ভাবনা কিংবা কেউ অনেকদিন ধরে গোসল করেনি, কিছু স্পর্শ না করেই বুঝতে পেরেছি একটা অনুভূতির কারণে। 

ঘ্রাণ।
ঘ্রাণ জিনিসটা কী? কীভাবে পাই আমরা? নাক কীভাবে কাজ করে? চলুন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

সেন্স অফ স্মেল, বা ঘ্রাণ প্রাণীজগতে এক গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্স ম্যাকানিজম৷ এর মাধ্যমে প্রাণীরা অনেক বিপদের বেশি কাছে না গিয়েই সেটার আঁচ দূর থেকে পেয়ে যায়, প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। 

আমরা গন্ধ পাই নাক দিয়ে। 
মানুষসহ বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীরই ঘ্রাণেন্দ্রিয় হিসেবে থাকে নাক। নাকের ভেতরের এপিথেলিয়াল টিস্যুতে থাকে অসংখ্য অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর। এগুলো ঘ্রাণের উদ্দীপনা গ্রহণ করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

ঘ্রাণ মূলত কেমিক্যাল সেন্স।
পদার্থের উপরিভাগ (Surface) থেকে সবসময় বাতাসে অণু ছড়িয়ে পড়ে। তাদের বলা হয় Odorous molecule. যখনই কোনো পদার্থের অণু আমাদের নাকে প্রবেশ করে, অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টরগুলো উদ্দীপিত হয়৷ আমরা ঘ্রাণ অনুভব করি।
যে পদার্থগুলো Volatile অর্থাৎ বাতাসে ব্যাপিত হয়, শুধু তাদের ঘ্রাণই পাওয়া সম্ভব। যেমন স্বর্ণের কোনো ঘ্রাণ নেই কারণ বাতাসে স্বর্ণ ব্যাপিত হয় না। 

নাক এবং ব্রেইনের যে অংশ সমন্বিতভাবে ঘ্রাণ নিয়ন্ত্রণ করে তার নাম অলফ্যাক্টরি সিস্টেম। এর গঠনের দিকে নজর দেয়া যাক।

নাকের যে অংশ ঘ্রাণের উদ্দীপনা গ্রহণ করে তার নাম অলফ্যাক্টরি এপিথেলিয়াম। এটা নাসাল প্যাসেজ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অংশকে ব্রেইন থেকে পৃথক করে রাখে বিশেষ ধরনের হাড়,যার নাম Cribiform plate. প্লেটের উপর থাকে বলের মত অলফ্যাক্টরি বালব যেটা এপিথেলিয়ামকে ব্রেইনের সাথে সংযুক্ত করে। বালব থেকে অসংখ্য স্নায়ু প্রবেশ করে এপিথেলিয়ামে। এগুলোকেই আমরা বলি অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর। 
সেখানে আরো থাকে সুক্ষ্ম চুল এবং মিউকাস, যেগুলোর কাজ হলো ধূলোবালি আটকানো। যখন আমরা শ্বাস গ্রহণ করি,বাতাসের সাথে আশেপাশের বিভিন্ন বস্তুর সার্ফেস থেকে আসা Odorous molecule গুলো নাকে প্রবেশ করে। তারা অলফ্যাক্টরি এপিথেলিয়ামের উপর দিয়ে যায় এবং মিউকাসে দ্রবীভূত হয়।

মিউকাসে দ্রবীভূত হয়ে অণুগুলো অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টরের সংস্পর্শে আসে। এগুলো অসংখ্য প্রোটিনের সেট,যারা যুক্ত থাকে এমিনো এসিড চেইনের মাধ্যমে। প্রত্যেকটি প্রোটিনের এমিনো এসিড সিকুয়েন্স আলাদা। তাই তারা আলাদা আলাদা অণুর প্রতি সেন্সিটিভ। 

            Olfactory receptors 
রিসেপ্টরের প্রোটিনগুলো মূলত বিশেষ ধরনের নিউরনের ডেনড্রাইট যেগুলো অলফ্যাক্টরি বালব থেকে আসে। একই ধরনের রিসেপ্টরগুলো একে অপরের সাথে সিন্যাপ্সের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। যখন অণুগুলো মিউকাস থেকে রিসেপ্টরের সংস্পর্শে আসে, সেই নির্দিষ্ট অণুর প্রতি সেন্সিটিভ রিসেপ্টরগুলো তার সাথে ক্রিয়া করে এবং অ্যাক্টিভ হয়৷ অন্যান্য রিসেপ্টর অণুগুলোকে রিজেক্ট করে দেয়। রিসেপ্টর প্রোটিনের সাথে অণুগুলোর কিছু চেইন রিয়েকশন ঘটে। বিক্রিয়াগুলো কোষে আ্যাকশন পটেনশিয়াল ট্রিগার করে।

অ্যাকশন পটেনশিয়াল একটা জটিল প্রক্রিয়া। এটা বুঝতে হলে জানতে হবে আরো দুটি পটেনশিয়াল সম্পর্কে, যেগুলোর নাম মেমব্রেন পটেনশিয়াল এবং ইলেকট্রন পটেনশিয়াল। ইলেকট্রন পটেনশিয়াল হলো কোনো ফিল্ডের নির্দিষ্ট  বিন্দু থেকে একক ইলেকট্রন চার্জ অন্য বিন্দুতে নিতে যে শক্তি দরকার হয় তার পরিমাণ। 
আমরা জানি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের সমস্ত ক্রিয়াই নিয়ত্রিত হয় ইলেকট্রিক সিগন্যাল ফ্লোর কারণে৷ সেটা এই ইলেকট্রিক পটেনশিয়ালের সাথেই জড়িত। যেকোনো বায়োলজিক্যাল কোষের মেমব্রেনে প্রথম রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু হয়, যখন সেটা কোনো অণুর সংস্পর্শে আসে, সেখানে ইলেকট্রনীয় ক্রিয়া ঘটে। যার কারণে মেমব্রেনের ভেতর ও বাইরে ইলেকট্রন পটেনশিয়ালের একটা পার্থক্য সৃষ্টি হয়। সেটাকেই বলা হয় মেমব্রেন পটেনশিয়াল।  

কোনো কোষ যখন বিক্রিয়া শুরু করে, তার মেমব্রেন পটেনশিয়ালের ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকে। এই পরিবর্তন কোষগুলোতে উদ্দীপনা জাগায় এবং ইলেকট্রিক সিগন্যাল হিসেবে পরিবাহিত হয়। এটাই অ্যাকশন পটেনশিয়াল। 

অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টরে প্রোটিন অংশের সাথে অণুসমূহের বিক্রিয়ায় G- প্রোটিন অ্যাক্টিভ হয় । এরপর Adenylyl  Cyclase নামক এনজাইমের উপস্থিতিতে রিসেপ্টরে থাকা ক্যাটায়ন চ্যানেলকে অ্যাক্টিভেট করে। আয়ন অ্যাক্টিভেশনের ফলে মেমব্রেন পটেনশিয়ালে চেঞ্জ আসে। অ্যাকশন পটেনশিয়াল ট্রিগার হয়।
অ্যাকশন পটেনশিয়ালের কারণে তৈরি হওয়া ইলেকট্রিক ইমপালস চলে যায় অলফ্যাক্টরি বালবের গ্লোমেরুলাস নামক অংশে। প্রতিটি গ্লোমেরুলাস একই ধরনের অনেকগুলো রিসেপ্টরের সাথে সংযুক্ত থেকে উদ্দীপনা গ্রহণের কাজ করে। গ্লোমেরুলাসের সাথে সংযুক্ত থাকে Mitral এবং Tufted কোষ। এদের কাজ প্রতিটি স্বতন্ত্র গ্লোমেরুলাস থেকে আসা উদ্দীপনাকে অলফ্যাক্টরি ট্র‍্যাক্টে পৌছে দেয়া। কোষগুলো ট্র‍্যাক্টের সাথে অনেকগুলো অ্যাক্সনের মাধ্যমে যুক্ত থাকে যেগুলোকে একত্রে বলা যায় অলফ্যাক্টরি নার্ভ। 

সেখান থেকে ইমপালসের শেষ গন্তব্য অলফ্যাক্টরি কর্টেক্স। এটি মস্তিষ্কের সেই অঞ্চল, যেখানে ঘ্রাণের উদ্দীপনা নিয়ন্ত্রিত হয়। ইমপালসের প্রকৃতি অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন ঘ্রাণের অনুভূতি পাই। অলফ্যাক্টরি কর্টেক্সের অবস্থান ব্রেইনের টেম্পোরাল লোবে। এই কর্টেক্সের প্রধান অংশ Piniform Cortex. 
এছাড়া এর সাথে যুক্ত থাকে Amygdala, Hypothalamus, Hippocampus। 

      Olfactory unit of our brain 
Piniform Cortex প্রত্যেক ভিন্ন ভিন্ন অণুর জন্য ভিন্ন ঘ্রাণের অনুভূতি দেয়। এই কর্টেক্স Amygdala, Hippocampus এর সাথে যুক্ত থাকে। এগুলো মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারক অংশ। তাই প্রত্যেকটি ঘ্রাণকে মস্তিষ্ক আলাদাভাবে চিনে রাখতে পারে এবং পরবর্তীতে আবার মনে করতে পারে সে এই ঘ্রাণ কোথা থেকে পেয়েছে। 

               Limbic System 
অলফ্যাক্টরি সিস্টেম লিম্বিক সিস্টেমের সাথে যুক্ত থাকে। লিম্বিক সিস্টেম সেই অংশ, যেটা মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। ঘ্রাণের সাথে বিশেষ কোনো স্মৃতি জড়িত থাকলে লিম্বিক সিস্টেম সেই ঘ্রাণ পবে কোনো সময় পেলে সেই স্মৃতি মনে করতে পারে এবং আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে। কিছু ঘ্রাণ ডোপামিন ও অক্সিটোসিনের নিঃসরণ ঘটায়, ফলে সেগুলোর প্রতি মানুষের একপ্রকার নেশা তৈরি হয়। যেমনটা কেরোসিন, পেট্রোল কিংবা নতুন বইয়ের গন্ধে অনেকের হতে দেখি।

কিছু কিছু ঘ্রাণকে আমরা ভালো, এবং কিছু বাজে গন্ধ হিসেবে শনাক্ত করি। যদি ঘ্রাণ কেমিক্যাল সেন্স হয় তাহলে এই ব্যাপারটি আসে কোথা থেকে? 
আমরা কেন কোনো কিছুকে সুগন্ধ বা দুর্গন্ধ হিসেবে বিবেচনা করি,সেটা এখনও পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায়নি। তবে হাইপোথিটিক্যালি ধরা হয় যেসব বস্তু আমাদের জন্য সাধারণত ক্ষতিকর, সেগুলো থেকে আমরা কটু গন্ধ পাই।  যেমনটা কোনো জিনিস পঁচে নষ্ট হলে আমরা দুর্গন্ধ অনুভব করি। কারণ তার মধ্যে থাকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। এই সেন্স ও অভিজ্ঞতাগুলো পূর্বপুরুষদের থেকে আমাদের মধ্যে বাহিত হয়ে এসেছে। আবার অনেক কেমিক্যাল নাকের টিস্যু ও রিসেপ্টরে ইরিটেশন তৈরি করে। সেগুলোকেও আমরা কটু এবং ঝাঁঝালো গন্ধ হিসেবে পাই।
সেন্স অফ স্মেলের সাথে সেন্স অফ টেস্টও সংযুক্ত। ঘ্রাণের মাধ্যমে অনেকে স্বাদও বুঝে যায়। দুর্গন্ধ নাকে এলে অনেকে থুথু ফেলে কিংবা বমি করতে চায়। গন্ধ পাওয়ার মাধ্যমে সে বস্তুটি আমাদের ভেতরে প্রবেশ করার একটি অনুভূতি তৈরি হয়। মস্তিষ্ক ভাবে কোনো কিছু খাওয়া হয়েছে এবং  চায় সেটাকে বাইরে বের করে দিতে। তাই বমি বা থুথু ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়।

ঘ্রাণের উদ্দীপনা অনেকের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর নির্ভর করে। আমরা দেখতে পাই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছে ময়লার দুর্গন্ধ অনেকটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে অভ্যাস করলে মানুষ দুর্গন্ধেও মানিয়ে নিতে পারে। 

আবার,একই ঘ্রাণ কারো কাছে সুগন্ধ কিন্তু কেউ সেটা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। এই ব্যাপারটাও এখনও সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়নি। তবে আমাদের সবার অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর টাইপের মধ্যে প্রায় ৩০% রিসেপ্টরে গাঠনিক পার্থক্য থাকে। এটা একটা কারণ হতে পারে এমনটা ঘটার। তাছাড়া বিভিন্ন ধরণের স্মেল ডিসঅর্ডারও দেখা যায়, যেখানে মানুষ অন্যদের কাছে বাজে মনে হওয়া গন্ধকে ভালো কিংবা সুঘ্রাণকে বাজে গন্ধ মনে করতে পারে।
সব মিলিয়ে ঘ্রাণের ইন্টারপ্রিটেশন এখনও অনেকটা ঝাপসা। কোয়ান্টাম বায়োলজির সাহায্যে ভবিষ্যতে আরো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। আপাতত মলিকিউলার লেভেলে কিছু হাইপোথিসিস পাওয়া যায় মাত্র।

সব বস্তুর ঘ্রাণই যে আমরা পাই, এমনটা কিন্তু না। যেসব অণুর জন্য রিসেপ্টর নেই, তাদের ঘ্রাণ আমরা পাই না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বিউটেন গ্যাসের কথা। এটা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ঠিকই, কিন্তু ঘ্রাণ আমরা পাই না কারণ এর জন্য রিসেপ্টর নেই আমাদের। 
মানুষের অলফ্যাক্টরি সিস্টেম প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ঘ্রাণ শনাক্ত করতে পারে। কুকুর বা অন্যান্য কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। কারণ মানুষের তুলনায় তাদের রিসেপ্টর সংখ্যা অনেকগুণ। কুকুরের প্রায় ৬০০ মিলিয়ন রিসেপ্টর থাকে যেখানে মানুষের থাকে মাত্র ১০ মিলিয়ন। তাই তাদের গ্রাণশক্তি মানুষের চাইতে অনেক প্রখর। 

ভার্টিব্রেটদের অলফ্যাক্টরি সিস্টেম প্রায় একই। নাকে অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর এবং সেরিব্রাল কর্টেক্সের বড় অংশ জুড়ে থাকে অলফ্যাক্টরি কর্টেক্স। 
অন্যান্য শ্রেণির প্রাণীতে ভিন্ন মেকানিজম দেখা যায়। সব প্রাণীর মাঝে মেরুদন্ডীদের মতো নাক থাকে না। কিছু সরীসৃপ তাদের মুখে থাকা সুক্ষ্ম ছিদ্র দিয়েই ঘ্রাণ নেয়।। পাখিরা ঠোঁটের সাহায্যে,টিকটিকি জাতীয় প্রাণীরা জিহবা এবং পোকারা ত্বক দিয়েই গন্ধ পায়৷ 

বিবর্তনিক ধারায় ঘ্রাণ খুব গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বিবর্তনের অন্যান্য ধারার মতো এটিও মিউটেশন থেকে এসেছে। যদি বিপদ স্পর্শ না করে দূর থেকে তার আঁচ পাওয়া যায় তাহলে সার্ভাইভালে সেটা বেশি সহায়ক। আমাদের অতি আদি পূর্বপুরুষদের কেউ মিউটেশনের ফলে বাতাসে ভেসে বেড়ানো Odorous Molecule শনাক্ত করার ক্ষমতা পেয়েছে।  কোন বস্তু থেকে তা আসছে তাও জানতে পেরেছে। এই স্মৃতি পরে তার কাজে এসেছে। এভাবে এই মিউটেশন টিকে থাকার পক্ষে সহায়ক হওয়ায় সেই প্রজাতি টিকে যায় এবং তার প্রজন্ম ধরে সকল প্রজাতিতে স্থানান্তরিত হয়। ধীরে ধীরে এই সেন্স আরো উন্নত হয়, স্বতন্ত্র অলফ্যাক্টরি সিস্টেম গড়ে উঠে। উন্নত প্রাণীদের ঘ্রাণের ম্যাকানিজম আরো সুক্ষ্ম হয়। যেটার উদাহরণ আমরা দেখতে পাই মানুষের মধ্যে।

কিছু প্রাণী যারা ভালো চোখে দেখতে পায় না তাদের জন্য ঘ্রাণ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে। ঘ্রাণের মাধ্যমে শিকারী থেকে রক্ষা পাওয়া কিংবা শিকার ধরার প্রবণতা প্রাণীজগতে অনেক দেখা যায়। কিছু প্রাণী তাদের সঙ্গী চিনে রাখতে কিংবা বাচ্চাদের আলাদা করতে ঘ্রাণকে কাজে লাগায়। পারষ্পরিক যোগাযোগেও অনেক প্রাণী এই সেন্স ব্যবহার করে বিশেষ গন্ধযুক্ত তরল নিঃসৃত করার মাধ্যমে। পিঁপড়াদের ফেরোমন তার সুন্দর একটি উদাহরণ। 
মানুষের জীবনে ঘ্রাণের ভূমিকা সবারই জানা। অনেক ক্ষতিকর জিনিস থেকে বেঁচে যাই আমরা এই অনুভূতির কারণে। সুঘ্রাণ আমাদের কাছে সৌন্দর্যের পরিচায়ক। যে কারণে ফুলকে মানুষ পবিত্রতা, ভালোবাসা ও সৌন্দর্যের প্রতীক মনে করে। পরিবেশকে আনন্দপূর্ণ ও আকর্ষণীয় করে তুলতে সুগন্ধযুক্ত বস্তু ব্যবহার কয়া হয়। এয়ার ফ্রেশনার কিংবা পারফিউম সবাই-ই কম বেশি ব্যবহার করে। 

বিবর্তন প্রাণীজগতকে কতটা জটিল ও বৈচিত্র‍্যপূর্ণ গঠন দিয়েছে তা প্রাণীদের ইন্দ্রিয়ের দিকে তাকালেই উপলদ্ধি করা যায়। মানুষের আবেগ, অনুভূতি সমস্ত কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া। ঘ্রাণের অনুভূতিও তার ব্যতিক্রম নয়। 

মানুষসহ প্রতিটি জীবের ভেতরে যেন একেকটি ল্যাবরেটরি, যেগুলো প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে আপন গতিতে। 
আপনার ভেতরের রিসেপ্টরগুলো ভালো থাকুক, ভালো থাক কেমিক্যাল রিয়েকশনগুলো, ভালো থাকুন আপনি। 

চলতে থাকুক রিয়েকশনের সাড়া,
চলতে থাকুক সবার জীবনধারা।



Post a Comment

Previous Post Next Post